বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই নারী ক্ষমতায়নের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করেছেন একাধিক প্রকল্পের সূচনা। রাজ্যজুড়ে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপ্রশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রভৃতি প্রকল্পগুলি। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পটি বিশ্বদরবারেও বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি, বাংলার মহিলাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকেও টেক্কা দিতে চলেছে কন্যাশ্রী। চলতি বছরে এই প্রকল্পের জন্য সারা রাজ্য জুড়ে ৩ কোটিরও বেশি আবেদন ইতিমধ্যেই মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। যেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রাপক সংখ্যা ২ কোটির সামান্য বেশি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের ১৮ হাজার ১৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ৩ কোটি ৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৫৫ জন পড়ুয়া এবারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য আবেদন জানিয়েছিল যা কার্যত এক নয়া মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলেছে। এই ৩ কোটি আবেদনের মধ্যে চলতি তারিখের তথ্য বলছে, ইতিমধ্যেই ৩ কোটি ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯০টি আবেদন এই প্রকল্পের জন্য মঞ্জুর হয়েছে। এই ৩ কোটির মধ্যেই রয়েছে নতুন করে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করা পড়ুয়ারা, আবার রয়েছে পুরোনো পড়ুয়ারাও। কন্যাশ্রী প্রকল্পের কে-১, কে-২ ও কে-৩, ৩টি স্তরের পড়ুয়ারাই রয়েছে এই ৩ কোটির হিসাবের মধ্যে। সেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যের বর্তমান উপভোক্তার সংখ্যা ২ কোটি ১০ লক্ষের মতো।
অর্থাৎ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের থেকেও প্রায় ১ কোটি বেশি উপভোক্তা হয়ে গিয়েছে কন্যাশ্রীর। এই ছবি স্পষ্টতই জানান দিচ্ছে, বাংলাবাসীর আস্থা রয়েছে মমতাতেই। বর্তমানে বার্ষিক ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার আয়ের মধ্যে থাকা পরিবারের মেয়েরাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাতে পারে। অষ্টম শ্রেণি থেকেই সেই আবেদন করা যায়। সেই আবেদন পরে কে-১ হিসাবে। এটি কন্যাশ্রী প্রকল্পের একদম প্রথম ধাপ। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েরা এই ক্ষেত্রে আবেদন জমা দিতে পারে। খালি তাঁদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে থাকতে হবে এবং অবিবাহিত হতে হবে। এই আবেদন গৃহীত হলে প্রতি বছর ১০০০ টাকা করে পাওয়া যায়। এরপরেই চলে আসে কন্যাশ্রীর দ্বিতীয় ধাপ কে-২। ১৮ বছর বয়স হলে এবং তারপরও অবিবাহিত থাকলে এবং স্কুলে বা কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে গেলে এই আবেদন করা যায়। সেক্ষেত্রে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পায় ওই পড়ুয়া। আবার যারা কে-২-র সুবিধা পেয়ে গিয়েছে এবং স্নাতকে নূন্যতম ৪৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছে সেই মেয়েরা কে-৩-র জন্য আবেদন জানাতে পারে। এক্ষেত্রে আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের কোনও মাপকাঠি দেওয়া হয়নি। আবেদন গৃহীত হলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পাবেন আবেদনকারী পড়ুয়া।