চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে পদ্মশিবিরের ‘চারশো পার’-এর হুঁশিয়ারি। দেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ২৪০ ছুঁতেই নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের। পাশাপাশি, বাংলার বুকেও হতশ্রী ফল করেছে তারা। আর এর পর থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দিয়েছে পদ্ম-পরিবারের অন্দরে। ক্রমশই প্রকাশ্যে আসছে দলীয় অন্তর্ঘাত। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রায় ৭৬ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আর এই পরাজয়ের জন্য দলের স্থানীয় মণ্ডল সভাপতিদের এবং জেলা নেতৃত্বের একাংশের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছেন তবে বিজেপির দুই নেতা-কর্মী। নিজের হার মেনে নিতে না পেরে লকেট সরাসরি অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন লকেট। সুতরাং হুগলি জুড়ে ফের বেআব্রু হয়ে পড়েছে গেরুয়াশিবিরের আভ্যন্তরীণ কোন্দল।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার হুগলিতে গিয়েছিলেন এক কর্মসূচিতে। তখনই তাঁর কাছে দলীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ জানান। সোমবার এক সংবাদমাধ্যমকে টেলিফোনে লকেট জানান, “দলের মণ্ডল ও বুথ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ না করে জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার তৃণমূল কংগ্রেস এবং আইপ্যাকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন। জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা গড়মিল থেকে দলবিরোধী কাজের কথা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। ওঁর দলবিরোধী কাজের তথ্যপ্রমাণ সব আমার কাছে রয়েছে। দল ডাকলে সেগুলি তাদের দেখাব।” তবে, হুগলি জেলার মানুষ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পাঁচ বছর পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার।
স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সংগঠন ভাঙনের মুখে। জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর এমন মনোভাব থাকলে তা দলকে আগামী দিনে আরও ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার গোটা বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, “লকেটদি এমন কথা বলতেই পারেন না। আমি আইপ্যাক বা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখিনি। দলের পরাজয় নিয়ে মণ্ডল ও বুথ কমিটির সঙ্গে বিশ্লেষণ চলছে।” বিজেপির এই নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ নিয়ে প্রতিক্রিয়া এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে। ঘাসফুল শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগের কথা তৃণমূল নেতৃত্বও অস্বীকার করেছে। আর লকেট চট্টোপাধ্যায়ের পরাজয় নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন তথা ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। “লকেট চট্টোপাধ্যায় এলাকায় কাজ করেননি। তাই হেরে গিয়েছেন। ওঁকে মানুষ পছন্দ করেন না। আমাদের সংগঠন অত্যন্ত মজবুত। তাই বিজেপির সাহায্য লাগে না। মানুষ আমাদের সরকারের জনমুখী প্রকল্পের জন্য ভোট দিয়েছেন”, সাফ জানিয়েছেন তিনি।