২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে পদ্মশিবিরের ‘চারশো পার’-এর হুঁশিয়ারি। দেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ২৪০ ছুঁতেই নাজেহাল হতে হয়েছে তাদের। পাশাপাশি, বাংলার বুকেও শোচনীয় ফল করেছে তারা। আর এরপর থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপির অন্দরে। আরও একবার ফুটে উঠল সেই চিত্র। যার জেরে ঘোর বিপাকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেশ শাসনের স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ বন্ধ করে দেওয়ার ডাক দিয়ে চাপের মুখে তিনি। বুধবার সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য বিজেপির বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠক চলার মধ্যেই তাঁর মন্তব্যের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছেন শুভেন্দু। প্রথমে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। পরে নিজের এক্স হ্যান্ডলেও কী কারণে ওই স্লোগান বদলের কথা তিনি বলেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মোদী সরকারের মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সরাসরিই বলেছেন, শুভেন্দুর ওই বক্তব্য দল অনুমোদন করে না। সুকান্তের কথায়, ‘‘বাংলায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিজেপি এগোবে।’’ ফলত স্বাভাবিকভাবেই খুল্লমখুল্লা হয়ে পড়েছে দলীয় মতান্তর। এমনিতে বিজেপির এই দলীয় বৈঠকের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার নয়। তবে আগে থেকেই রাজ্য বিজেপি ঠিক করেছিল রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর এবং শুভেন্দুর বক্তৃতার সরাসরি সম্প্রচার হবে। সংবাদমাধ্যমকেও ওই সময়ে কর্মসমিতির বৈঠকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। সেখানে বক্তৃতা করতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগান বন্ধ করতে হবে। সে কথা বলার পাশাপাশি বিজেপির সংগঠনে বড় রকমের পরিবর্তনের প্রস্তাবও দেন। বলেন, দলের সংখ্যালঘু মোর্চা রাখার প্রয়োজন নেই। শুভেন্দু ওই বক্তব্য পেশ করার পরেই শুরু হয় শোরগোল। তার পরেই বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি ব্যাখ্যা দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তবে তাঁর ব্যাখ্যায় শুধু মোদীর স্লোগান নিয়ে তাঁর বক্তব্যের কথা রয়েছে। সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে কোনও বক্তব্য জানাননি শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, তিনি কেবল বাংলার ক্ষেত্রে ওই আহ্বান করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পরেই মোদী ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগান দিয়েছিলেন। সেই স্লোগান পরে বিজেপিও ব্যবহার করে। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি যে সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন পায়নি, সে কথা বলতে গিয়ে শুভেন্দু প্রকাশ্যেই গলার স্বর চড়িয়ে বলেন, ‘‘আমিও বলেছি রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আপনারাও বলেছেন সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। আর বলব না।’’ এর পর দু’হাত জড়ো করে কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘‘বলব, যো হমারি সাথ, হম উনকা সাথ। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ বন্ধ করো।’’ বারংবার ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার আগে রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে হাঁটতে চাওয়ার মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘নো নিড অফ সংখ্যালঘু মোর্চা।’’ অর্থাৎ, দলে সংখ্যালঘু মোর্চা রাখার প্রয়োজন নেই। সেই সময় মঞ্চেই ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডেদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের বৈঠকের মধ্যেই প্রকাশ্য কর্মসূচিতে শুভেন্দুর এমন মন্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও এই বিভ্রাট কী ভাবে কাটানো যায়, তা নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করেন উপস্থিত নেতৃত্ব। এর পরেই ব্যাখ্যা দেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর প্রথমার্ধের বক্তব্যের পরে মুখ খোলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ‘‘এটা কারও মনের কথা হতে পারে। কিন্তু ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ তো মোদী সরকারের স্লোগান! সেটাকে কী করে অস্বীকার করা যাবে?’’, সরাসরি জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার বেলা ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হয়েছিল। শেষ হতে হতে বেলা বিকেল যায়। কিন্তু বৈঠক শেষের আগেই প্রথমার্ধে বলা নিজের বক্তব্যের সাফাই দিতে শুরু করেন শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে , প্রথমে নিজের বক্তব্য শুভেন্দু যা বলেছিলেন, তা সমর্থন করছেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। দলের অস্বস্তি কাটাতেই শুভেন্দুকে সাফাই দিতে বলা হয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি। শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা দলের পক্ষে প্রচার করাও শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও দলের অন্য একাংশের দাবি, বিরোধী দলনেতা নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে। তাই তিনি নিজেই ত…