এর আগের লোকসভা ভোটগুলিতে কংগ্রেস কখনও পেয়েছে ৪৪, কখনও ৫২। সবথেকে করুণ দশা হয়েছে ৩২টি আসন পেয়ে। তাও কেরালা, পাঞ্জাব এবং তামিলনাড়ু থেকে জিতে। যেখানে বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদী শক্তির অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু, এবার বিজেপির ৪০০ পারের স্লোগানকে মিথ্যা প্রমাণ করে তাদের ২৪০-এ ঠেকিয়ে রাখতে কংগ্রেসের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র মোদী-বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকে একছাতার তলায় ধরে রাখাই নয়, সংসদে বিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবারের ভোটে কংগ্রেস সর্বতোভাবে লাভবান হয়েছে। হিন্দি বলয় বা বলা ভালো বিজেপির গোবলয়ে অর্থাৎ হরিয়ানা থেকে বিহার পর্যন্ত তলানিতে ঠেকে যাওয়া ৫টি এমপি থেকে ২৩টি আসনে জিতেছে তারা। মহারাষ্ট্রে সরকার হারানোর পরেও দারুণ ফল, পাঞ্জাবে বিজেপিকে খাতা খুলতেই দেয়নি। উত্তর-পূর্বের মণিপুর নিয়ে লাগাতার মোদী বিরোধী রাহুল গান্ধীর প্রচার ও সমালোচনার সুফল ঘরে তুলেছে ২টি আসনেই জিতে। নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ে পা রেখেছে।
শুধু আসন সংখ্যাই নয়, ভোটের গোপন সত্য নিহিত থাকে প্রাপ্ত ভোটের হারে। সর্বভারতীয় দৃষ্টিতে দেখলে কংগ্রেসের মাত্র ১.৭ শতাংশ ভোটবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু, মনে রাখতে জোটধর্ম বজায় রাখতে কংগ্রেস এবার ৯৩টি কম আসনে লড়েছে। ফলে যে আসনগুলিতে লড়াই করেছে, সেখানকার ভোটের হার দেখলে দেখা যাবে ২০১৯ সালের তুলনায় ৯.৮ শতাংশ ভোট বেড়েছে হাত চিহ্নের। এর সঙ্গে তুলনায় বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কেন্দ্রে ভোট কমেছে ১.৬ শতাংশ পয়েন্ট।
কেরালা, উড়িষ্যা এবং পাঞ্জাব বাদ দিলে কংগ্রেস প্রায় সব রাজ্যেই ভোট শতাংশের হার বাড়িয়েছে। এর পিছনে যে কারণগুলি রয়েছে তা হল, রাহুল গান্ধীর দুই পর্বে ভারত জোড়ো যাত্রার অভূতপূর্ব সাফল্য। দ্বিতীয়ত, বিজেপির চড়া সুরে হিন্দুত্ববাদের বিরোধিতা করে যাওয়া, কৃষকদের সমর্থনে, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন আন্দোলন। মণিপুরে অশান্তির কারণে সোজাসুজি মোদীকে কাঠগড়ায় তোলাসহ সংসদে হিন্ডেনবার্গ-আদানি কাণ্ড নিয়ে শোরগোল।
কংগ্রেস একের পর এক নির্বাচনে হারতে হারতে তৃতীয় সারিতে চলে গিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে নিজেদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে তারা। ২০১৯ সালে হিন্দিবলয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া কংগ্রেস আর কোনওদিন বিজেপির চোখে চোখ রেখে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়েছে। এই প্রবাদও মিথ্যা করে দিয়েছে তারা। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় কংগ্রেসের ভরাডুবির পর থেকে এটা যেন ধ্রুবসত্যে পরিণত হয়েছিল। এবার তার মধ্যে ৬২টি কেন্দ্রে জিতেছে রাহুলের দল। শুধু তাই নয়, বিজেপির জয়ের ব্যবধানের অঙ্ককে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
একটা সময় এসে গিয়েছিল যখন আঞ্চলিক শরিক দলগুলি কংগ্রেসকে বোঝা বলে মনে করতে শুরু করেছিল। এবার কংগ্রেস তাকেও মিথ্যা প্রমাণ করেছে। শুধু তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্র নয়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি এবং জম্মু-কাশ্মীরেও। শুধু ব্যর্থ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। কংগ্রেসের পিতৃভূমি উত্তরপ্রদেশ। সেখানেই কংগ্রেসের ভোট শেয়ার চলে গিয়েছিল ২ শতাংশে। কিন্তু, এবার মিরাক্যল ঘটিয়ে দিয়েছে দেশের সরকার গড়ার রাজ্যে।