এবার ভোট প্রচারে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারে বারে বলেছেন, ‘মোদীর গ্যারান্টি’র কথা। লপদ্ম শিবিরের নির্বাচনী ইস্তাহারও আসলে মোদীর গ্যারান্টি হিসাবেই প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক দফার ভোটের প্রচারে গ্যারান্টি বিলোচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি বিভিন্ন সভায় কখনও বিজেপি তো কখনও এনডিএ প্রার্থীদের নাম করে জনতাকে গ্যারান্টি দিচ্ছেন। বলছেন, ইনি জিতলে অনেক বড় জায়গায় দেখা যাবে। আমি সেই গ্যারান্টি দিচ্ছি। শাহ স্পষ্ট না করলেও কারও বুঝতে বাকি থাকছে না তিনি আসলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক অথবা পার্টির উচ্চপদে বসানোর আশ্বাস বিলোচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ হেন ভাষণ নিয়ে দলে রীতিমতো এই আলোচনা শুরু হয়েছে, যে শাহ কি মোদীকেও দল ও সরকারে তাঁর ক্ষমতা নিয়ে বার্তা দিচ্ছেন!
মোদীর উত্তরসূরি কে তা নিয়ে বিজেপিতে প্রকাশ্যে কোনও আলোচনা এখনও শোনা যায়নি। দলে অলিখিত নিয়ম চালু আছে দল ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ৭৫ বছর পর্যন্ত থাকা যাবে। সেই হিসাবে আগামী বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মোদীর ৭৫ পূর্ণ হবে। এবার ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলে তিনি ৭৫-এ পা দেওয়া মাত্র সরে যাবেন, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও ইঙ্গিত নেই। বরং তাঁকে ঈশ্বর বিশেষ কাজের জন্য পাঠিয়েছেন এবং পরমাত্মা ২০৪৭-এ বিকশিত ভারত তৈরির সংকল্প তাঁকে দিয়ে পূরণ করাতে চান বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বিজেপি ও আরএসএসের অন্দরেও জল্পনা উসকে দিয়েছেন তাঁর অবসর নিয়ে। তবে মোদী ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পুরো পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকলেও তাঁর উত্তরসূরি বাছাই নিয়ে আলোচনাই শুধু নয়, সম্ভাব্য নেতাকে তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে।
বিজেপির অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে শাহ কি সেই প্রক্রিয়াই শুরু করেছেন? এই ব্যাপারে কি প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়েই এগোচ্ছেন তিনি? শুধু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই নয়, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করার আভাসও থাকছে তাঁর কথায়। যেমন বিহারের নেতা নিত্যানন্দ রাই কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিহারে তাঁর হয়ে প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাই আমার পরম-বন্ধু। আমাদের বোঝাপড়া অতুলনীয়।’ একথা ঠিক, সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংক্রান্ত বেশিরভাগ প্রশ্নের জবাব রাই দিয়ে থাকেন। তাঁকে দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন শাহ। বিহারের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শাহ আসলে আগামী বছর বিহার বিধানসভার ভোটে রাইকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করার ইঙ্গিত দিতেই তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ‘বহত বড়া পদ মে দিখেঙ্গে।’
শাহ যে সেটা পারেন তার প্রমাণ ছত্তীসগড়। গত বছর সেখানে বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি প্রার্থী তথা দলের আদিবাসী নেতা বিষ্ণুদেও সাঁই সম্পর্কে শাহ বলেছিলেন, ‘ওঁকে জেতান। আমরা সরকার গড়তে পারলে ওঁকে অনেক বড় পদে বসাবো।’ ফল প্রকাশের পর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের মতো পোড়খাওয়া নেতাকে সরিয়ে সাঁইকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি। সোমবার পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় বিজেপি প্রার্থী রণবীর সিং বিট্টুকে নিয়েও জনতাকে গ্যারান্টি দিয়েছেন শাহ। বিট্টুকে তাঁর বহুদিনের বন্ধু উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ওঁকে জেতান। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, ওঁকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া আমাদের কর্তব্য।’ রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, অমিত শাহ আসলে নিজে থেকেই আগামী দিনে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধির আভাস দিতে শুরু করেছেন।