বছর ৩ আগের কথা। ২ মে, ২০২২। সেদিন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছিল। সেই দিন রাতেই কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় খুন হয়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল রাজ্যের শাসক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সেই ঘটনার জেরে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তারপর বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হাতে। কয়েকজন এখনও ‘ফেরার’ হয়ে রয়েছেন। যারা এই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তাঁদের বেশ কয়েকজনের সম্পত্তির দখলও নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
ওই ঘটনায় বিজেপির তরফে অভিজিতের মা মাধবী সরকারকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। অথচ সেই কাঁকুড়্গাছি এলাকাতেই গত রবিবার বিজেপি এই খুনের ঘটনায় বেশ কিছু অভিযুক্তকে দলে জামাই আদরে বরণ করে যোগদান করিয়েছে। আর সেটা দেখেই এখন কাঁদছেন মাধবী।
কী বলছেন অভিজিতের মা মাধবী সরকার? কান্নায় ভেঙে পড়া মাধবীর বক্তব্য, ‘যারা সেদিন আমার ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে খুন করল, পার্টির নেতারা তাঁদেরই বরণ করে নিলেন! আমার মরা ছেলের স্মৃতিতে তৈরি শহিদ বেদির পাশে গেরুয়া মঞ্চ বেঁধে এই দলবদলের অমানবিক খেলা খেলল ওরা। ছেলের রক্তের বদলে বিজেপি নেতারা বাড়ি এসে ৫ লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, ওই টাকা ফিরিয়ে দেব। মায়ের কোল খালি হওয়ার মূল্য ওরা বুঝবে না। আমার লড়াই আমি নিজেই লড়ে নেব। ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি শান্তিতে ঘুমাব না।’
অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার ছিলেন খুনের ঘটনার অন্যতম সাক্ষী। তিনি যাতে সাক্ষী না দেন, তার জন্য নিত্যদিন হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। করা হয়েছে মারধরও। সেই বিশ্বজিৎ এখন জানাচ্ছেন, ‘ভাই বিজেপির বেলেঘাটা মণ্ডলের সহ-সভাপতি ছিল। ওর মৃত্যুর পর প্রতিদিন আমাকে-মাকে খুনের হুমকি শুনতে হয়েছে। আমি নিজেও বিজেপি করতাম। কিন্তু এখন ভাইয়ের খুনিরাই দলের সদস্য! এই দল আমি আর করব না।’