আগামী ১৪ই নভেম্বর, মঙ্গলবার বিকেলে নৈহাটিতে বড়মার মন্দিরে পুজো দিতে যেতে পারেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এবিষয়ে প্রকাশ্যে পুজো কমিটির তরফে কেউ কিছু ইঙ্গিত দিতে চাননি। তবে পুলিশ প্রশাসনের তরফে এবিষয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, শতবর্ষ উপলক্ষে নৈহাটি রেল স্টেশন সংলগ্ন অরবিন্দ রোডের বড়মার নবনির্মিত মন্দিরের দারোদঘাটনে আসার কথা ছিল অভিষেকের। সেদিন না আসতে পারলেও শুভেচ্ছাপত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই বড়মার ২২ ফুট উচ্চতার ঘন কালো কৃষ্ণবর্ণের প্রতিমা নির্মাণও শেষ হয়ে গিয়েছে। শনিবার মায়ের চক্ষুদানের পর সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে সোনার অলংকার পরানো। রবিবার রাত ১২টায় শুরু হবে অত্যন্ত জাগ্রত মায়ের পুজো। তারপর রীতি মেনে নৈহাটির অন্যান্য কালীপুজো শুরু হবে। পুজো কমিটির অনুমান, শতবর্ষে অন্যান্য বারের ভক্তদের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে। দণ্ডী কাটবেন ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। আজ রবিবার থেকে চারদিন বন্ধ থাকবে বড়মার নবনির্মিত মন্দির। তাই আগের দিন শনিবার মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কষ্টিপাথরের বড়মাকে পুজো দেওয়ার জন্য ভোর থেকেই ভিড় জমিয়েছিল ভক্তরা।
উল্লেখ্য, আনুমানিক একশো বছর আগে নৈহাটি অরবিন্দ রোডে এই সুউচ্চ কালী প্রতিমার পুজো প্রথম শুরু করেন ভবেশ চক্রবর্তী। প্রথমে এই পুজো বড়কালী নামে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে ভক্তদের মুখে মুখেই ‘বড়মা’ হিসাবেই পরিচিতি লাভ করে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর ভক্তরা বড়মার টানে পুজোর দিন নৈহাটিতে চলে আসেন। গত বছর কালীপুজোর আগেই পুজো কমিটির ঠিক করেছিল বড়মার পুজোর ১০০ বছর উপলক্ষে ফোটোর বদলে পাকাপাকিভাবে বসবে বড়মার কষ্টিপাথরের মূর্তি। মন্দির-সহ নির্মাণ করা হবে ভোগ খাওয়ার ঘর, অতিথি নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম। এবিষয়ে বিশেষ উদ্যোগী হন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং পুজো কমিটির সভাপতি তথা নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়। এরপরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের ভক্তদের অনুদানে তৈরি হয় মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজ। সাড়ে চার ফুট উচ্চতার কষ্টিপাথরের মূর্তি নির্মাণ করেন রাজস্থানের শিল্পী ধর্মেন্দ্র সাউ। ভক্তদের দানে তৈরি ১০০ ভরি সোনার অলংকারে সাজানো হয় বড়মাকে। মায়ের নিচে শায়িত শিবকে সাজানো হয় রুপোর মুকুট, ত্রিশূল, পাদুকা-সহ অন্যান্য সাজ দিয়ে। লক্ষ্মীপুজোর দিন মায়ের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। পরেরদিন নবনির্মিত মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। কালীপুজোর সময় যেভাবে মায়ের বাইশ ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরি করে পুজো হয়, সেই রীতি অনুসরণ করেই লক্ষ্মীপুজোর দিন কাঠামো পুজো করা হয়েছে। বিগত বছরগুলির মতো এবছরও নৈহাটির শিল্পী শুভেন্দু সরকার প্রতিমা তৈরি করছেন। নৈহাটি বড়কালী পুজো সমিতির কমিটির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, সোমবার ভোর থেকে ১০০ ঘণ্টা প্রসাদ বিতরণ হবে। শতবর্ষ উপলক্ষে পুজোর আগে ১০০টি জায়গায় ১০০টি করে শাড়ি দেওয়া হয়েছে। পুজোর কদিন নবনির্মিত মন্দিরে প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এই দিনগুলিতে মন্দির সংলগ্ন অরবিন্দ রোডে সুউচ্চ বড়মার দর্শন করতে পারবেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।