গত শনিবার ইজরায়েলের বুকে ভয়ঙ্কর আঘাত হানে প্যালেস্টাইনের জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস। গাজা থেকে মিনিট কুড়ির মধ্যে ছোড়া হয় ৫ হাজার রকেট। এর পরই জঙ্গি গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইজরায়েল সরকার। পালটা হামলা করে তারা। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজরায়েলের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, এই লড়াইয়ে ভারত পুরোপুরি ইজরায়েলের পাশে আছে। মোদীর এই একপেশে ইজরায়েল পন্থা, কংগ্রেস সরকারের তো বটেই, বিজেপি সরকারেরও আগের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বলা হচ্ছে, এই ‘সরে আসার’ সিদ্ধান্ত সুচিন্তিত।
একাধিক কারণে ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে ভারসাম্যের নীতিকে ঝেড়ে ফেলে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন মোদী। তার প্রথম কারণ অবশ্যই ২০২৪-এর নির্বাচন। মেরুকরণের প্রশ্নে আগামী দিনে যে হিন্দুত্বের ঝড় তুলতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব, এ তারই পূর্বাভাস। আজ যশোভূমি কনভেনশন সেন্টারে জি২০ দেশগুলির
সংসদীয় স্পিকারদের সম্মেলনে তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় মোদী ইজরায়েলে হামাসের আক্রমণের দিকে ইঙ্গিত করেই তীব্র ভাষায় সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে দু’দুবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইজরায়েলপন্থী বিবৃতি দেওয়ার ৫ দিন পরে একটি প্রশ্নের উত্তরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, সব কিছুর পরেও সার্বভৌম, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গড়ার প্রক্রিয়ায় ভারত উৎসাহ জুগিয়ে এসেছে। সেই অবস্থান একই রয়েছে।
কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, পশ্চিম এশিয়া তথা আরব রাষ্ট্রগুলির প্রতি মোদী সরকারের নির্ভরশীলতা ও সখ্যের খাতিরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে ইজরায়েলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে তেল আভিভের পাশে থাকার স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন, সেখানে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বক্তব্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবেই। মোদী বার বার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের ঘোর নিন্দা করছেন। কিন্তু প্যালেস্টাইনের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের কথা এক বারও উল্লেখ করেননি। সূত্রের মতে, প্রথম কারণটি হল ভোটের বালাই। চব্বিশের লোকসভার লড়াই কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। আর রাখ ঢাক না করে তাই হিন্দুত্বের ঝড় তোলাটাই এখন অগ্রাধিকার।
ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে বিদেশ নীতিকে প্রণয়ন করার যে ভঙ্গি এই সরকারেরও কিছুটা ছিল, তা এই আপৎকালীন সময়ে প্রয়োজন নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের মাটিতে তৈরি হওয়া আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে দীর্ঘদিন জর্জরিত ভারত। ফলে হামাসের চরম বিরোধিতা ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যেও কড়া বার্তা। তৃতীয়ত, মোদী হামাসের চরম নিন্দা করে কৌশলগত শরিক আমেরিকার কাছেও সদর্থক বার্তা দিতে চাইলেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের কিছুটা রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে থাকা অবস্থান এবং নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে মস্কো থেকে তেল কেনার বিষয়গুলি ওয়াশিংটনকে অখুশি করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে মোদীর হামাসকে নিশানা করা, বাইডেন প্রশাসনকে খুশি করবে। তবে সংঘাত যদি বাড়তেই থাকে তা হলে ভারত এই অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।