বেজে গিয়েছে ভোটের দামামা। কদিন পরেই দেশের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এমতাবস্থায় প্রবল অস্বস্তি শুরু হয়েছে পদ্মশিবিরের অন্দরে। বিধানসভা ভোটে মধ্যপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নাম বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চতুর্থ তালিকায় প্রকাশ করেছে। গত দেড় মাস যাবৎ রাজ্যে জল্পনা ছিল শিবরাজ নাকি টিকিট পাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত টিকিট পেলেও রাজ্যের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী যে এবারের ভোটে দলের মুখ নন তা স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতত্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন, দল সরকার গড়ার সুযোগ পেলে তখন ঠিক হবে কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, ভিন্ন ছবি বিরোধী দল কংগ্রেসে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথকে সামনে রেখে প্রার্থী তালিকা তৈরি থেকে প্রচার, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কংগ্রেস। এআইসিসি-র তরফে রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা মধ্যপ্রদেশের দায়িত্বে থাকলেও তাঁকে আড়ালে থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। মধ্যপ্রদেশের আর এক নেতা দ্বিগ্বিজয় সিংহও প্রতি পদে কমলনাথের সঙ্গে আলোচনা করে পা ফেলছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বর্তমান সভাপতিকে সব কিছু জানিয়েই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন তিনি।
পাশাপাশি, রাজস্থানে বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রবীণ নেত্রী বসুন্ধরা রাজের নাম দলের প্রথম তালিকায় নেই। শুধু তাই নয়, প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার, মরুরাজ্যের বিজেপির কোনও কমিটিতে স্থান হয়নি দলের দু’বারের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। ইতিমধ্যে দল স্পষ্ট করে দিয়েছে, টিকিট যদি বা মেলেও, বসুন্ধরা দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী নন। অন্যদিকে, কংগ্রেস বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী প্রবীণ অশোক গেহলটকে সামনে রেখে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা কানে তুললেও গেহলটকে ভোটের মুখে বেইজ্জত করতে চান না খাড়্গে। রাজস্থানের দুশো আসনের টিকিট বণ্টনের ভার গেহলটের উপরই ছেড়েছেন খাড়গে। তারমধ্যে অন্তত ৫০টি আসনের ব্যাপারে শচীনের মতামত গুরুত্ব পাবে এবং সেই আসনগুলিতে দলকে জেতানোর দায়িত্ব তিনি নেবেন, এমনই অলিখিত বোঝাপড়া হয়েছে। শচীন চেয়েছিলেন তাঁকেই টিকিট বণ্টনের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হোক। তাতে মুখ্যমন্ত্রী গেহলটের প্রতি অনাস্থার বার্তা যাবে বুঝেই সেই দাবি কানে তোলেননি খাড়গে। নভেম্বরে ভোট হবে ছত্তিশগড়েও। সেখানে ক্ষমতায় কংগ্রেস। সেখানেও বিজেপির তালিকায় এখনও স্থান হয়নি টানা তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের। তাঁরও নির্বাচনকেন্দ্রীক কোনও কমিটিতে স্থান হয়নি। দল স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো ছত্তীসগড়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই বিজেপির মুখ। অথচ, শুধু তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়াই নয়, প্রবীণ এই নেতা ছত্তিশগড়ের জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে সরকারি উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন। সেই কারণে রাজ্যে তিনি ‘চাউল বাবা’ নামে পরিচিত। কিন্তু মোদী-শাহ-নাড্ডার কাছে সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন না তিনি। আর কংগ্রেস লড়াই করবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে সামনে রেখে।
উল্লেখ্য, রাজস্থানের মতো ছত্তিশগড়েও কংগ্রেসে শক্তিশালী বিক্ষুব্ধ শিবির আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিংদেওকে আপাতত উপমুখ্যমন্ত্রী করে ঠান্ডা করা হয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় টিকে গেলে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু বাঘেলের প্রতি কোনও রকম অনাস্থার বার্তা দেননি খাড়গে। ছত্তিশগড়ের প্রার্থী তালিকা তৈরিতে মুখ্যমন্ত্রীকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস বিরোধী দল। বিধানসভার অন্দরে ও বাইরে দু-জায়গাতেই হাত শিবির এখন শাসক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রধান প্রতিপক্ষ। এক বছর আগেও ছবিটা এমন ছিল না। লাগাতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিজেপির বিরোধী পরিসরে জায়গা করে নেয়। বিরোধী পরিসর এখন অনেকটাই কংগ্রেসের দখলে। এর পিছনে রাজ্য বিজেপির লড়াকু সভাপতি বন্দি সঞ্জয়কে আচমকাই মাস কয়েক আগে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিফলন আছে বলে মনে করছেন দলের অনেকেই। কংগ্রেসের অন্দরের খবর, তেলেঙ্গানায় দলের ভাল অবস্থা ফেরার পিছনে খাড়গে জমানার প্রভাব কাজ করছে। সভাপতি হওয়ার পর খাড়গে দু’বার তেলেঙ্গানা গিয়েছেন। দুই সফরেই তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কথাই অগ্রাধিকার পাবে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ভোগ করার পাশাপাশি দলকে জেতানোর দায়িত্বও নিতে হবে বলে জানিয়েছেন খাড়গে।