গর্ভধারণের পর থেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের কোপ পড়ে কন্যা সন্তানের ওপর। তারপর বয়স যত বাড়ে, ততই সামাজিক, পারিবারিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্যের ঘটনা বাড়তে থাকে। জীবিকার সুযোগ, এমনকী সম কাজে পৃথক বেতনের মতো বঞ্চনারও শিকার হন নারীরা। এ হেন লিঙ্গ বৈষম্যকে দূর করতে দরকার যথাযথ শিক্ষা, সুরক্ষার সুনিশ্চিতকরণ এবং নারী ক্ষমতায়ন। তার জন্য প্রয়োজন দেশের সরকারের সদিচ্ছা। কিন্তু মোদী জমানায় অমিল কেন্দ্রের সেই সদিচ্ছাটাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৩-১৪ সালে মোদী সরকার নিজেই নির্ভয়া প্রকল্প চালু করে। যার আওতায় ছিল পুলিশ হেল্পলাইন ও পরিবহণে নিরাপত্তার সুনিশ্চিতকরণ। ওই বছর নির্ভয়া তহবিলের জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ সালে, পরপর তিন অর্থবর্ষে তা কমিয়ে ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। পরবর্তী দুই অর্থ বছরে, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ সালে আরও কমিয়ে বরাদ্দ পাঁচশো কোটিতে নামিয়ে নেয় মোদী সরকার। এদিকে, বরাদ্দের সঙ্গে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক। ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ভয়া প্রকল্পের জন্য ১২০০৮.৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যার মধ্যে মোটে ৪,৯২৩ কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে, যার কেবল ২,৫২১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যা বরাদ্দকৃত অর্থের ২১ শতাংশ মাত্র।
২০২০-২১ সালে ওয়ান স্টপ সেন্টার প্রকল্পে ১৬০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। ‘মিশন ফর প্রোটেকশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট ফর উইমেন’-এর অধীনে এই প্রকল্পটি এখন মিশন শক্তি-র ‘সম্বল’ নামে নতুন একটি কর্মসূচির অধীনে। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’, ‘নারী আদালত’, ‘মহিলা পুলিশ ভলিন্টিয়ার’, এবং ‘মহিলা হেল্পলাইন’ ইত্যাদিগুলোকে মিলিয়ে সম্বলের অধীনে নিয়ে আসা হয়। ২০২১-২২ সালে সম্বলের জন্য মোট ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, সেই বছরে তা থেকে ১৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় যা বরাদ্দের প্রায় ৩১ শতাংশ। পরবর্তী বছরগুলিতে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে ৫৬২ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছিল৷
বস্তুত, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই নারীসুরক্ষা ও নারীকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। প্রতি বছর বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অব্যবহৃত টাকার অঙ্ক। উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। কারণ প্রায় প্রতিদিনই দেশে নারীর প্রতি হিংসার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি মণিপুরে নারী নির্যাতনের ঘটনায় আঁতকে উঠেছে দেশ। নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেছে। আবার ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান তথা বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে সাতজন মহিলা কুস্তিগীরকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগও প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মোদী সরকার লাগাতার বরাদ্দ কমিয়ে না বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় না করে, নারী সুরক্ষায় গৃহীত প্রকল্পগুলোকে গুরুত্বহীন করে ফেলেছে।