ফের একবার মোদী সরকারকে তোপ দাগলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি নয়াদিল্লীতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক অব্যাহত। ১৯টি বিরোধী দল একযোগে জানিয়ে দিয়েছে, রবিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত থাকছে না। দেশের সাংবিধানিক প্রধান হওয়া সত্ত্বেও কেন রাষ্ট্রপতির বদলে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। এ বার পুরুলিয়ার জনসভা থেকে সেই প্রশ্নই আর একবার উসকে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতিকে উদ্বোধনে না রাখার কারণও ব্যাখ্যা করলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। “পার্লামেন্টের নতুন ভবনের উদ্বোধন হবে। সেখানে এক জন জনজাতি, মূলবাসী, আমাদের গর্ব যাঁরা, সেই এসটি প্রতিনিধি আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি বলে, তাঁকে আজ সংসদ ভবনের উদ্বোধনে ডাকা হল না আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নামও উল্লেখ করা হয়নি”, জানিয়েছেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার হুটমুড়া ময়দানে জনসভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গ্রামীণ প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ করে রাখার অভিযোগ তোলেন অভিষেক। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নেন তিনি। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রিমোট কন্ট্রোল করে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছেন।”
পাশাপাশি জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর হাতে রিমোট কনট্রোল থাকলে, আপনার হাতে ইভিএমের বোতাম রয়েছে।” ২০০০ টাকার নোটবাতিল নিয়েও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “এ বার নোট বদলের জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রী বদলের জন্য লাইনে দাঁড়ান।” তবে পুরুলিয়ার মতো তফসিলি জাতি এবং জনজাতি অধ্যুষিত জেলায় অভিষেক যে ভাবে, সংসদ ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘ব্রাত্য’ করে রাখা নিয়ে সরব হয়েছেন, তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। অভিষেকের কথায় উঠে আসে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের প্রসঙ্গও। দলিত সমাজের প্রতিনিধি হওয়ার কারণে তাঁকে সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সরব হওয়ার ডাক দেন তিনি। সকলকে উন্নয়নের জন্য ভোট দেওয়ার আর্জি জানান অভিষেক। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো ৪ বছরে এলাকায় কী কাজ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল জিতলে ৫০০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পুরুলিয়ায় কোনও দলের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় তফসিলি জাতি এবং জনজাতি ভোটের মাধ্যমেই। গত লোকসভায় এই ভোটের সিংহভাগ গিয়েছিল বিজেপির দিকে। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে জনজাতি আবেগকে অভিষেক উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন বলে মনে করা হচ্ছে। অভিষেকের সভা যখন চলছে, সে সময় ঝড়বৃষ্টি চলছিল। সে দিকে ইঙ্গিত করে অভিষেক বলেন, “এটা মানুষের ঝড়, নইলে বিরোধীদের চক্রান্ত বন্ধ করা যাবে কী করে?” তৃণমূল সূত্রে খবর, শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে দলের নবজোয়ার যাত্রা কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও উপস্থিত থাকবেন সেখানে।