সম্প্রতি রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থার ওপর একটি রিপোর্ট পেশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। আর সেই রিপোর্টেই মুখ পুড়ল বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের। কারণ আরবিআইয়ের রিপোর্ট বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় লাগাতার কমছে ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত। রাজ্যে ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আর্থিক বৃদ্ধির হারের নিরিখে তা লাগাতার চলে যাচ্ছে পিছনের সারিতে। আর এই ঘটনাই বলে দিচ্ছে, রাজ্যের আর্থিক হালের ভোল বদলেছে মমতা জমানায়।
এ রাজ্যের ঋণ নিয়ে যাঁরা গেল গেল রব তোলেন, তাঁদের মোক্ষম জবাব এই পরিসংখ্যানই। রাজ্যের মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু সামাজিক পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা সে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই হোক কিংবা রূপশ্রী, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু হোক। যে টাকা সাধারণ মানুষ পাচ্ছে, তার ৯৮ ভাগই ফিরে আসছে বাজারে। অর্থাৎ মানুষ সেই টাকা খরচ করছেন। তাতে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। রাজ্যের নিজস্ব জিডিপিতে তার প্রভাব পড়ছে।
আরবিআইয়ের রিপোর্ট বলছে, গত অর্থবর্ষ শেষে বাংলার বুকে রাজ্য সরকারের ঋণের অঙ্ক ছিল ৫ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষ শেষে, অর্থাৎ মার্চের মধ্যে তা ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে। টাকার অঙ্কে মোটেও কম নয়। কিন্তু তারপরও কি বলা যায়, ঋণের ভারে ডুবে যাচ্ছে বাংলা? উত্তর হল, না যাচ্ছে না। আর এই দাবি নবান্নের নয়, বরং খোদ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের। আর তাতে সঙ্গত করছে আরবিআইও।
তাঁদের রিপোর্ট বলছে, ২০১১ সালের মার্চ শেষে রাজ্যে ঋণের ভার ছিল ৪১.৯ শতাংশ। সহজ কথায়, রাজ্যে ১০০ টাকার পণ্য উৎপাদন হলে, ঋণের ভার ছিল প্রায় ৪২ টাকা। তারপর তা ধাপে ধাপে নেমে আসে ৩৪.৬ শতাংশে। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ শেষে তা আচমকাই বেড়ে পৌঁছায় ৩৯.৫ শতাংশে। এরপর অবশ্য লাগাতারভাবে কমেছে সেই ঋণভার। ২০২১ সালের মার্চ শেষে তা দাঁড়ায় ৩৮.২ শতাংশে। পরের অর্থবর্ষ, অর্থাৎ ২০২১-২২ শেষে ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত দাঁড়ায় ৩৫.৮ শতাংশে। চলতি বছর শেষে তা ৩৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরবিআইয়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফিনান্স বা এনআইপিএফ-ও জানাচ্ছে, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে ঋণভার কমছে। এই মাপকাঠিতে বাংলা ভারতের সবক’টি রাজ্যকে একেবারে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই কেন্দ্রীয় সংস্থার তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ছ’বছরে রাজ্যগুলিতে যেভাবে ঋণের নিরিখে জিডিপির অনুপাতের বদল হয়েছে, তাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল জায়গায় আছে বাংলা।