আগেই মধ্যবিত্ত বাঙালির হেঁশেলে ঢোকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে খাসির মাংস, ইলিশ মাছ। সাম্প্রতিককালে বাদের খাতায় চলে যেতে বসেছে পোস্তও। কারণ আকাশছোঁয়া দাম। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব সঞ্জয় মালহোত্রার কাছে এই ব্যাপারে চিঠি গিয়েছে। তাতে সরকারি ফার্মে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণে পোস্তচাষের কথা সরকার বিবেচনা করছে বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমাদের রাজ্যে ১৬৩টি সরকারি খামার রয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণে পোস্তচাষ করা যেতেই পারে।’ নবান্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্র এই অনুমতি দিয়ে দেবে, এটা ধরে নিয়েই রাজ্যের হর্টিকালচার বিভাগ ইতিমধ্যেই পোস্তচাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জল জমে না এমন খামারগুলি আলাদা করে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যা পোস্তচাষের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত। বাংলায় যে পোস্ত চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার মানুষই সবচেয়ে বেশি পোস্ত খায়। চাহিদা সর্বাধিক। বাংলায় পোস্ত চাষ হলে কেন্দ্রকে আর বাইরে থেকে পোস্ত আমদানি করতে হবে না। যা অর্থনৈতিকভাবে বাংলা তথা দেশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর।’
বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় খাদ্য বাজেট নিয়ে বলতে গিয়ে পোস্ত চাষ নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন। প্রশ্ন তোলেন, কেন মাত্র চারটি রাজ্যে পোস্ত চাষ হবে? বাংলা কেন পোস্ত চাষের অনুমতি পাবে না? মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী শিবিরে থাকা বিধায়কদেরও এই ব্যাপারে সরব হতে বলেন। কেন্দ্রকে লিখতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট যুক্তি, বাংলার মানুষ সবচেয়ে বেশি পোস্ত খায়। আলুপোস্ত, পোস্ত বড়া, ঝিঙেপোস্ত, রুইপোস্ত। সবই পছেন্দর মেনু। তবু চড়া দামে ভিন রাজ্য থেকে পোস্ত কিনতে হচ্ছে। বাংলায় পোস্ত চাষ হলে রাজ্যবাসীকে ১০০ টাকায় পোস্ত খাওয়ানো যাবে।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পোস্তচাষের ব্যাপারে নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানেই কেন্দ্রের কাছে অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ চারটি রাজ্যকে পোস্তচাষের অনুমতি দেওয়া আছে। পুণেতেও একটি সংস্থাকে গবেষণার স্বার্থে পোস্তচাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এবার ছাড়ের পরিধি বাড়িয়ে বাংলাকেও অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। বাজারে পোস্তর চাহিদা আকাশছোঁয়া। আসলে নারকোটিক বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণেই পোস্তচাষ করতে পারে না রাজ্যগুলি। শুধু কয়েকটা রাজ্যকে ছাড় দেওয়া আছে।