দারিদ্র্য তাঁদের নিত্যদিনের দোসর। বছরভর অভাব-অনটনের মধ্য দিয়েই হয় দান গুজরান। কেউ ভ্যান চালক, কেউ বা তাঁত শ্রমিক। তবে দোল এলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়। বিভিন্ন জেলা, ভিনরাজ্য থেকে পর্যটকরা আসেন। এলাকা ম-ম করে উৎসবের গন্ধে। তাই এই দিনগুলো আরও বেশি টাকা রোজগার করতে নিজেদের ঘরগুলোও ছেড়ে দেন নবদ্বীপের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। পর্যটকদের ঘর ভাড়া দিয়ে নিজেরা তাঁবু খাটিয়ে কোনওরকমে কাটিয়ে দেন। বদলে উপার্জন করেন কিছু টাকা, যা দিয়ে বছরের কয়েকটা মাস সংসার চালানো যায়। নবদ্বীপের চৈতন্যপল্লি, হরিতলা, সমাজপাড়ার মতো বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরে থাকতে দেন দোল উৎসব দেখতে আসা পর্যটকদের। জানা গেছে, প্রায় ১৫০-২০০ পরিবার এইসময় নিজেদের আস্তানা পর্যটকদের ভাড়া দেন। বিদেশ থেকেও পর্যটকরা এইসময় নবদ্বীপে আসেন। ব্রাজিল, জার্মানি, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো একাধিক দেশ থেকে বিদেশিরা এইসময় ঘুরতে আসেন শ্রীচৈতন্যের এলাকায়। সামিল হন দোলযাত্রায়।
এপ্রসঙ্গে চৈতন্যপল্লীর এক বৃদ্ধা বলেন, “স্বামী মারা গিয়েছেন বহুবছর আগে। লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে কোনওরকমে সংসার চালাই। এখন আমার টিনের বাড়ির একটি ঘরে দিল্লির এক ভক্ত মহিলা রয়েছেন। এই ক’দিন যা রোজগার হবে, তাই দিয়ে সংসারে একটু সুরাহা হবে।” অন্যদিকে নেতাজীনগরের এক বাসিন্দা জানান, “ছোটখাট ব্যবসা আছে। সেখান থেকে সামান্য আয় হয়। ওতে সংসার চলে না। তাই দোলের সময়টুকু ঘর ভাড়া দিতে শুরু করেছি গতবছর থেকে।” যদিও এভাবে ঘর ভাড়া দেওয়া আইনত স্বীকৃত নয়। তবে গরিব মানুষদের কথা ভেবে এই কাজ বন্ধ করেনি পুলিশ। কিন্তু পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দা, সবার নিরাপত্তার দিকটি নজরে রাখা হচ্ছে। তাই যাঁরা ঘর ভাড়া দিচ্ছেন, তাঁরা যেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি রাখেন সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট কাগজপত্র ছাড়া ঘর ভাড়া দিতে নিষেধও করেছে প্রশাসন।
