ভারতের ফুটবলমহলে নেমে এল শোকের ছায়া। শেষ হল এক দীর্ঘ অধ্যায়ের। প্রয়াত হলেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার তুলসীদাস বলরাম। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বৃহস্পতিবার দুপুর ২.০৫ মিনিটে মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই রোগে ভুগছিলেন তুলসীদাস। শয্যাশায়ী ছিলেন। শেষের দিকে কিছু আর মনে করতেও পারতেন না। পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামীর অভিন্নহৃদয় বন্ধু তথা সতীর্থ বলরামও চলে গেলেন নিভৃতেই। উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালে ভারতের যে দল অলিম্পিক্সে ফুটবল খেলেছিল, সেই দলের শেষ জীবিত সদস্য ছিলেন বলরাম। পি কে এবং চুনীর সঙ্গে একসঙ্গে উচ্চারণ করা হত তাঁর নাম।
দেশেরর অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বলা হত তুলসীদাসকে। পি কে এবং চুনীর সঙ্গে জুটি বেঁধে বহু গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। দুই কাছের বন্ধুকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ‘পি কে-চুনী-বলরাম’ ত্রয়ী যুগেরও অবসান ঘটল। গত কয়েক বছরে উত্তরপাড়ার বাড়িতেই থাকতেন বলরাম। বাইরে খুব একটা বেরোতেন না। বেরোতে চাইতেন, এমনটাও নয়। রোগে ভোগা শরীর ক্রমশ জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। চলার ক্ষমতাও ছিল না বিশেষ। ফোন করতে একটানা বেশি ক্ষণ কথা বলতে পারতেন না। যতটা বলতেন, সেটাও ভাঙা গলায়, থেমে থেমে। শেষ দিকে তাঁর শুভানুধ্যায়ীদের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। নিয়মিত খোঁজ নেওয়ার কেউ ছিল না। গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। যখনই মনে হচ্ছিল বাড়ি ফিরবেন, তখনই নতুন কোনও না কোনও সমস্যা হচ্ছিল। শেষমেশ বাড়ি আর ফেরা হল না তাঁর।
কিংবদন্তির প্রয়াণে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “কিংবদন্তি ফুটবলার তুলসীদাস বলরামের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাঁর প্রয়াণে ইতিহাসের একটি অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা ফুটবলার তুলসীদাস বলরাম অলিম্পিক্স-সহ বহু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অধিনায়কও হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি অর্জুন-সহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়াজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি তুলসীদাস বলরামের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি”, লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।