সম্প্রতি আমেরিকার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, কারচুপি করে ধনী হয়েছেন আদানিরা। শেয়ার বাজারে তাঁদের যে অবস্থান, তার অনেকটাই কৃত্রিম। আর তারপর থেকেই ক্রমাগত পড়ছে আদানিদের শেয়ারের দর। সংস্থার এ হেন বিপর্যয়ের মুখে একে একে প্রকাশ্যে আসছে আদানিকে ঘিরে থাকা বিতর্ক। তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম করে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে ইতিমধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এবার আদানির সঙ্গে নাম জড়াল ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া)।
অভিযোগ, আদানির এক আত্মীয় সেবির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। ফলে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণেও আদানিরা প্রভাব খাটিয়ে থাকেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, সেবির সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগাযোগের নেপথ্যে সিরিল শ্রফ। তিনি একটি কর্পোরেট আইন সংস্থা চালান। এ ছাড়া, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির কমিটির সক্রিয় সদস্য তিনি। সিরিল সম্পর্কে গৌতম আদানির পুত্র কর্ণ আদানির শ্বশুর। সিরিলের কন্যা পরিধির সঙ্গে কর্ণের বিয়ে হয় ২০১৩ সালে। সেই থেকেই আদানিদের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন সিরিল। তিনি আদানি গোষ্ঠীকে বিভিন্ন বিষয়ে আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেবির সঙ্গে তিনি যুক্ত থাকায় ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগ জোরালো হয়েছে। অভিযোগ, শেয়ারের দাম সম্পর্কে সংস্থার গোপন তথ্য তিনি ফাঁস করে দিতেন আদানি এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের কাছে।
শেয়ার বাজারে লাগাতার বিপর্যয়ের মুখে আচমকা ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাতিল করে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিল যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল সিরিলের সংস্থা। আদানিদের ব্যবসায় সিরিলের ভূমিকা তাই প্রশ্নের মুখে। শুধু সিরিল নন, আদানি পরিবারের অন্য সদস্যদের নামও জড়িয়েছে দুর্নীতিতে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে অনেকের নাম রয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে হাজার কোটি টাকার হিরে দুর্নীতির প্রসঙ্গও। হিন্ডেনবার্গের ১০৬ পাতার রিপোর্টে গৌতম আদানির দাদা বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়ো সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া, ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি এবং ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়েছিল তাঁর।
অন্যদিকে, গৌতমের ভাই রাজেশ আদানির বিরুদ্ধে বেআইনি হিরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৯ এবং ২০১০ সালে দু’বার রাজেশকে গ্রেফতারও করা হয়। হিন্ডেনবার্গের নজরে রয়েছেন গৌতমের শ্যালক সমীর ভোরাও। অভিযোগ, হিরে দুর্নীতির অন্যতম হোতা ছিলেন তিনি। আমেরিকান সংস্থার রিপোর্টে হিরে দুর্নীতির আর এক কাণ্ডারি হিসাবে যতীন মেটার নাম করা হয়েছে। যতীনের পুত্র আদানির ভাইয়ের কন্যার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। এছাড়াও, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পেশায় দাঁতের চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান প্রীতি। অভিযোগ, তিনিও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।