প্রধানমন্ত্রীর পদে অভিষিক্ত হওয়ার থেকেই দেশবাসীর উদ্দেশে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা হোক বা ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি, সকলের মাথার উপর ঘরে হোক, বা ঘরে ঘরে পানীয় জল। কিন্তু পূরণ হয়নি কিছুই। গালভরা কথাই সার। এবার সেই ব্যর্থ প্রতিশ্রুতিগুলির তালিকায় নবতম সংযোজন ১০ লক্ষ নতুন চাকরিও। গত জুনে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি দেওয়া বলে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা অনেকটাই আলাদা। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যে পরিমাণ শূন্যপদ ছিল, চলতি বছর অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে তা এক লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রকের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং সংসদে প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, মোদী সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে মোট শূন্যপদের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৭৯ হাজার। ২০২২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি একই ধরণের প্রশ্নে সংসদে মোদী সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, কেন্দ্রের দপ্তরগুলির শূন্যপদের মোট সংখ্যা ৮ লক্ষ ৭২ হাজার। সাধারণ পাটিগণিত বলে, এক বছরে মোদী সরকারে শূন্যপদ বেড়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার। এই সংখ্যাটি গত বছরের মধ্যবর্তী সময়ে প্রথম আপলোড হয়। এরপর থেকে কোনও তথ্য আর বদল করা হয়নি, নতুন নিয়োগের ফলে শূন্যপদের সংখ্যা কত কমেছে কিনা, আদৌ নতুন নিয়োগ হয়েছে কিনা, সে সংক্রান্ত কোনও আপডেট দেওয়া হচ্ছে না। ফলত বাড়ছে সংশয়।
প্রসঙ্গত, নতুন নিয়োগের সংখ্যা বা শূন্যপদের সংখ্যা কত, সে সব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে পাওয়া যাবে বলেই জানিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, খোদ মোদী সরকারের হিসেবে যদি ৯ লক্ষ ৭৯ হাজার শূন্যপদ রয়ে যায়, তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কী উপায়ে ১০ লক্ষ নতুন নিয়োগ হবে? ইতিমধ্যেই ২০২৩ সালের দুমাস শেষ হতে বসেছে। রয়েছে মোটে দশ মাস। ফলে মোদীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করতে হলে মাসে ১ লক্ষ করে নতুন নিয়োগ করতে হবে! এ জিনিস অলীক কল্পনা বই আর কিছুই নয়। বিজেপির আমলে শূন্যপদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মোট শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৮৩ হাজার। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ৯ লক্ষ ১০ হাজার। ২০২০ সালে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৭২ হাজার। যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানা গিয়েছিল। ২০২২ সালে শূন্যপদের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৭৯ হাজার। অর্থাৎ এক লক্ষের বেশি শূন্যপদ বেড়েছে। বস্তুত অবসরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেখে নিয়োগ হচ্ছে না, তাতেই বাড়ছে শূন্য পদ। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল অবধি তিন বছরে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার নিয়োগ হয়েছে। অন্যদিকে মোদী জানিয়েছিলেন দেড় বছরেই ১০ লক্ষ নতুন চাকরি হবে। মোদী সরকারের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছিলেন, রাজ্যে রাজ্যে আয়োজিত রোজগার মেলাগুলো থেকে নাকি ১ লক্ষ ৪৭ হাজার নিয়োগ হয়েছে। মোদীর ঘোষণার পর অর্থাৎ জুন মাসের পর থেকে ৬ মাসে ১ লক্ষ ৪৭ তাহলে নিয়োগ হয়েছে। ফলে আগামী ১১ মাসে ৯ লক্ষ চাকরি দেবে মোদী সরকার? আদৌ কি তা বাস্তবায়িত হবে? উঠছে প্রশ্ন।