বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে স্বমহিমায় ফিরল সেলেকাওরা। এর আগে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে আকস্মিক হারের জেরে খানিক দুশ্চিন্তার উদয় ঘটেছিল ব্রাজিল সমর্থকদের মনে। শেষ ষোলোর ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ফের জ্বলে উঠলেন নেইমার-ভিনিসিয়াস-রিচার্লিসনরা। প্রথম থেকে আক্রমণের রাস্তায় হাঁটল ব্রাজিল। ৪৫ মিনিটেই ম্যাচ কার্যত শেষ হয়ে গেল। প্রথমার্ধে এল চার গোল। দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ উড়িয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেলেন নেইমাররা। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকেই ব্রাজিল কোচ তিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কোরিয়ার বিরুদ্ধে দলে রাখতে পারেন নেইমারকে। তবে প্রথম একাদশে রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেননি। এ দিন প্রথম এগারোতেই ছিলেন নেইমার। ৭ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোল করলেন ভিনিসিয়ার জুনিয়র। ডান দিক থেকে অসাধারণ পাস দিয়েছিলেন রাফিনহা। দক্ষিণ কোরিয়ার ডিফেন্ডারদের পেরিয়ে বল গিয়ে পৌঁছয় বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে থাকা ভিনিসিয়াসের কাছে। ভিনিসিয়াস কিছুক্ষণ থমকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান। গোল করেই গোটা দলকে সাইডলাইনের ধারে গিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে নাচতে দেখা গেল। হাত এবং পায়ে ছন্দ মিলিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচছিলেন নেইমাররা। ম্যাচে বার বার যে জিনিস দেখা গেল। প্রথম গোলের তিন মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। রিচার্লিসনকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলার। রেফারি ক্লেমঁ তুরপঁ সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ডান দিক-বাঁ দিক করে নেইমারকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন কোরিয়ার গোলকিপার। তা কাজে লাগেনি। কিপারকে উল্টো দিকে ঠান্ডা মাথায় গোলে বল জড়ালেন নেমার। এ বারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম গোল করলেন তিনি।
এরপর ম্যাচের ২৯ মিনিটের মাথায় নিজেদের তৃতীয় গোল করে ব্রাজিল। অসামান্য শৈলী দেখালেন রিচার্লিসন। মাথায় বল নিয়ে জাগলিং করে সঙ্গে সঙ্গে পাস দেন মার্কুইনোসকে। তিনি পাস দেন থিয়াগো সিলভাকে। থিয়াগোর পাস আবার জমা পড়ে রিচার্লিসনের পায়ে। বাঁ পায়ে গোল করেন রিচার্লিসন। বিশ্বকাপে তৃতীয় গোল হল তাঁর। সাত মিনিট পরেই চতুর্থ গোল ব্রাজিলের। এ বার গোল করলেন লুকাস পাকুয়েতা। রিচার্লিসন পাস দেন নেইমারকে। নেইমারের থেকে বল পান ভিনিসিয়াস। তাঁর পাস থেকে বল পেয়ে চলতি বলে শটে গোল পাকুয়েতার। বিরতির সামান্য আগে রিচার্লিসন গোলে আরও একটি শট নেন। কিন্তু কোরিয়ার গোলকিপার বাঁচিয়ে দেন। বিরতির আগে আর কোনও গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেও আক্রমণাত্মক মনোভাবের বদল হয়নি ব্রাজিলের। রাফিনহা দু’-তিন জন ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে শট নিতে গিয়েছিলেন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন কোরিয়ার গোলকিপার। মিনিট কয়েক পরে আবার একটি বল পান রাফিনহা। এ বার বিপক্ষ গোলকিপার কোণ ছোট করে আনেন। ফলে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখতে চেয়েও ব্যর্থ হন রাফিনহা। বাঁচিয়ে দেন কোরিয়ার গোলকিপার। ৬৭ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত সেভ করেন অ্যালিসন। বাঁ দিক থেকে ক্রস করেছিলেন কোরিয়ার ফুটবলার। ডান দিক থেকে আর এক ফুটবলারের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচালেন তিনি। ৭৫ মিনিটের মাথায় এক গোল শোধ দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ফ্রিকিক থেকে বল ক্লিয়ার করেছিলেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার। সেই বল সুন্দর রিসিভ করে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল পাইক সিউং হো। প্রথমার্ধে কোরিয়াকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে বরং তাঁদের খেলায় অনেক বেশি ছন্দ পাওয়া গেল। অনেক বার আক্রমণে উঠে এসেছে তারা। ম্যাচের শেষ দিকে নেইমার-সহ অনেক ফুটবলারকে বদলে দেন তিতে। এমন তৃতীয় গোলকিপার ওয়েভারটনকেও নামিয়ে দেন তিনি। উল্লেখ্য, এদিন ম্যাচের শেষ কিংবদন্তি পেলেকে বার্তা দিল ব্রাজিল দল। পেলের নাম লেখা ব্যানার নিয়ে দাঁড়ালেন ফুটবলাররা। শেষ আটের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।