আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ভারতবর্ষের “মসিহা” র ৭২ তম জন্মদিনে সুদূর নামিবিয়া থেকে উড়ে এল আটটি চিতা। এ কাহিনীর গোড়ার কথা সেই ১৯৫০ সালের, যখন সরগুজার মহারাজা সদম্ভে ভারতবর্ষের বুক থেকে শেষ চিতাটিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেললেন। তার আগে অবশ্য সেই মোঘল রাজাবাদশাদের আমল থেকেই রাজকীয় আমোদের অন্যতম প্রধান খেলনা এই নিরীহ বেড়ালটি। গেম হান্টিং বা শিকার করার উপকরণ হিসেবে যত্রতত্র ব্যবহার হত চিতা। ফলত কমতে কমতে শেষে ১৯৫০ সালে ভারতভূম থেকে চিরতরে বিদায় নিল এশিয়াটিক চিতা, পৃথিবীর দ্রুততম প্রাণীটি। অতঃপর স্বাধীন দেশে সেই ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকেই চিতাকে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু, যা বিশেষভাবে অগ্রগতি লাভ করে ২০০৯ সালে – জয়রাম রমেশের উদ্যোগে। তবে ভারতের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের দিকে তাকালে এই প্রজেক্টের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এই প্রকল্পের প্রাণপুরুষ এম কে রঞ্জিত সিং সহ অসংখ্য গবেষক দিনরাত এক করে মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর অভয়ারণ্যকে করে তুললেন চিতার বসবাসের উপযোগী। এখানেই নাটকের দ্বিতীয় আখ্যান আরম্ভ। যে ‘বেনিয়া’ সরকার প্রায় প্রতিদিন এক একটি ফরেস্ট ল্যান্ডের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে চলেছে, যাদের বন-বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কিছুই যায় আসে না তারা হঠাৎ কোনও এক জাদুবলে এই প্ৰজেক্ট নিয়ে চূড়ান্ত উৎসাহিত হয়ে উঠল।
২০২১ সালেই চিতার আসার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে, কিন্তু নানান সমস্যা ও কার্যকারণের ফলে সেই প্রকল্প রূপায়িত হয় না। বরং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নামিবিয়া এবং চিতা কনজার্ভেশন ফান্ড। খুব সঙ্গত কারণেই ভারতের তথাকথিত ‘আচ্ছে দিনের’ মার্গ দর্শক ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতি ফুলিয়ে এমন একটা ‘গালা ইভেন্টের’ লাইমলাইট নিজের দিকে না টেনে থাকবেন, একথা ভাবাই যায় না। অতএব যা হওয়ার, তাই হল। অসংখ্য বিজ্ঞানীর রক্ত জল করা পরিশ্রমের মুকুট মাথায় পরে রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক এলেন, হাত নাড়লেন, ছবি তুললেন তাঁর জন্মদিনে। ভাবতে লজ্জা হয় এই ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাসে’ বিজ্ঞানীদের এবং তাঁদের সহকারীদের নামটুকু পর্যন্ত উচ্চারিত হলো না সরকারি অনুষ্ঠানে, অথচ আগামিকাল থেকে এই অবলা প্রাণীদের দেখাশোনা, বাঁচা-মরা প্রভৃতির সমস্ত দায় তাঁদের। মহামান্য সরকার বাহাদুর আর ফিরেও তাকাবে না এই দিকে। ২০২৪ এর ইলেকটোরাল এজেন্ডা সম্পূর্ণ,গদগদ মুখে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান মোদিজির জন্মদিনে কপালে গেরুয়া টিপ পরিয়ে নিয়ে এলেন চিতা। ঔদ্ধত্য ও আত্মপ্রচারের আস্ফালনে ব্রাত্য হয়ে থাকলেন বিজ্ঞানীরা যাঁরা একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে বর্ষাকাল কখনওই এই কাজের উপযুক্ত সময় হতে পারে না, কিন্তু কী আর করা। জন্মদিন তো আর বদল হয় না! অতএব ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানিতে আর তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে তাঁর বাহাত্তর তম জন্মদিনে আসমুদ্রহিমাচলের মহামহিম দেশকে দিলেন এক গর্ব করার মতো উপহার।