বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অন্যতম পরিচায়ক হল কাঠের পুতুল। যার প্রসঙ্গ উঠলেই নাম আসে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামর। এই গ্রাম কাঠের পুতুলের গ্রাম নামে পরিচিত। ঘরে ঘরে দিন-রাত এক করে তৈরি হয় কাঠের পুতুল। এই শিল্প বঙ্গীয় ঘরানার এক স্বতন্ত্র অভিমুখ। যার সাথে বৈষ্ণবীয় ধারার গভীর সম্পর্কও রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন মেলা ছিল এতদিন এই কাঠের পুতুল বিক্রির জায়গা। পুজোর সময় কলকাতা ও জেলার বড় বড় মন্ডপের সামনে কাঠের পুতুলের পসার সাজাতেন শিল্পীরা। বিক্রিবাট্টা সব সময় যে ভালো হত তেমন নয়। তবে সামাজিক মাধ্যম এখন বিশ্বজুড়ে বাজার খুলে দিয়েছে নতুন গ্রামের শিল্পীদের সামনে। অনলাইনে পেমেন্ট মিলছে। সেই ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। চাহিদা বাড়ায় এখন ঘরে ঘরে ব্যস্ততা।
এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই শিল্পকে জিআই ট্যাগ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। রাধাকৃষ্ণ, গৌড় নিতাই, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা, বর-কনে তৈরি হলেও সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় কাঠের পেঁচা। আজ থেকে নয়, কয়েকশো বছর ধরেই এই পুতুল তৈরি হয় বর্ধমানের নতুন গ্রামে। আজকের এই নতুনগ্রামে একসময় ছিল ঘন জঙ্গল। একদল কাঠুরিয়া কাঠ কাটতে এসে এখানে এই গ্রাম গড়ে তোলেন। নাম হয় নতুনগ্রাম। সেখানে থাকতে শুরু করেন সূত্রধররা। প্রথমে পাথরের মূর্তি গড়লেও পরে তাঁরা এই কাঠের শিল্পকে আপন করে নেন। উল্লেখ্য, রথের মেলা, রাসযাত্রা, জয়দেবের মেলা সহ সব মেলাতেই নতুনগ্রামের বিভিন্ন কাঠের পুতুলের চাহিদা বরাবরের। চাহিদা বেড়েছে মঞ্জুষা, বিশ্ববাংলার স্টলে। তবে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে বিশ্বজোড়া বাজার পেয়েছে নতুনগ্রাম। রাজ্য দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার আসছে অন লাইনে। চাহিদা বাড়ায় বাড়ছে অভিনবত্বও। মনপ্রাণ ঢেলে কাজ করছেন শিল্পীরা।
