কার্যত তথৈবচ দশা বঙ্গ বিজেপির। কোনোকিছুই অনুকূলে যাচ্ছে না তাদের। গতবছর বিধানসভা নির্বাচনে দুশোর বেশি আসন নিয়ে রাজ্য জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল মোদী-শাহের রথ। এক বছরের মধ্যে সেই বাংলাতেই বিজেপির অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। একের পর এক নির্বাচনে হার, নেতাদের দল ছেড়ে যাওয়া, আভ্যন্তরীণ কোন্দল বিদ্ধ করেছে গেরুয়াশিবিরকে। উপনির্বাচনে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে ঘুম ছুটেছে দিল্লীর নেতাদের। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও উঠে এসেছে রাজ্য বিজেপির বিপর্যস্ত অবস্থার কথা। আগে বার রাজ্যের নেতাদের কথায় ভরসা করে ডুবেছিল বিজেপি। সূত্রের খবর, সেই পরিস্থিতি যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাই ময়দানেরে সঠিক তথ্য দেওয়ার বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্যও জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উপস্থিত রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে দিল্লি শিবির। রাজ্যে কোন পথে চলছে বিজেপি, বৈঠকে উপস্থিত রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী এবং কেন্দ্রীয় পদাধিকারী হিসেবে সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সম্পাদক অনুপম হাজরাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল সে প্রশ্নের। রাজনৈতিক হিংসার অজুহাতে সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা।
প্রসঙ্গত, কর্মসমিতির বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নাড্ডা অভিযোগ করেন, বাংলা-কেরলে বিজেপি কর্মীদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হচ্ছে। নাড্ডা সুরেই সুর মিলিয়েছেন মোদী সরকারের মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। আদপে বাংলায় বিজেপি ক্রমশ জমি হারাচ্ছে, বাংলায় বিজেপির হাতে যে কিছুই নেই রাজনৈতিক হিংসার উল্লেখ থেকেই ফের একবার তা প্রমাণ হল। ২০২১ সালের ৭ই নভেম্বর দিল্লীতে বিজেপির একদিনের কর্মসমিতির বৈঠকেও রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে আলোচনায় হয়েছিল। আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। অর্থাৎ বাংলায় বিজেপি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বা বলা ভাল ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু বিজেপি। শনিবার ২রা জুলাই হায়দ্রাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকের আগে, দলীয় পদাধিকারীদের বৈঠকে চলতি বছর উত্তরপ্রদেশসহ চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ও সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের দলের ফলাফল নিয়ে বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বাংলার প্রশ্ন উঠতেই, বঙ্গ বিজেপির নেতাদের অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অন্য রাজ্যে পদ্ম বাগান ফুলে ফলে ভরে উঠলেও, বাংলায় বিজেপির গাড়ি বিপরীত দিকে ছুটছে। কোন অবস্থাতেই বিজেপির পুরানো কর্মীরা নামছেন না, বিজেপির রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া বিজেপি কর্মসূচিতে দলের অন্য কোন নেতার দেখা নেই। বৈঠকে সেই সব প্রসঙ্গই তোলা হয়েছে। নানান ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে কেন সফল হচ্ছে না বঙ্গ বিজেপি? গলদ কোথায়? উঠছে প্রশ্ন। যা ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের উপর।