অবশেষে প্রকাশ্যে এল পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের জাবর পাহাড়-জঙ্গলে জোড়া চিতাবাঘের রহস্য। সম্ভাবনা ছিলই। এবার বনবিভাগের ট্র্যাপ ক্যামেরায় দিনের আলোয় ধরা পড়লো মাদি চিতাবাঘ। একেবারে ভোরের দিকে। একই ট্র্যাপ ক্যামেরায় দুটি চিতাবাঘের পৃথক পৃথক ছবি ধরা পড়েছে। একটি রাতের অন্ধকারে। আরেকটি ভোরের আলোয়। গত ২৭শে জুন, রাত ১টা ৫৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে যে চিতাবাঘের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় বন্দি হয় তা একেবারে হৃষ্টপুষ্ট। যা বারবার ধরা দিয়েছে শিকারের সামনে। আবার কখনও একা, কখনও আবার শিকার ভক্ষণে। আর যে ছবি ভোরের আলোয় ধরা পড়েছে, তা গত ২৯ জুন ভোর চারটে ৫৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের। এই চিতাবাঘটি মাদি। পুরুষ চিতাবাঘের মতো হৃষ্টপুষ্ট নয়। খানিকটা লম্বাটে গড়নের। সেইসঙ্গে উচ্চতাতেও ছোট। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও দেবাশিস শর্মা বলেন, “জোড়া চিতাবাঘের সম্ভাবনা ছিলই। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবির মধ্য দিয়ে সেটা অনেকাংশই নিশ্চিত হয়ে গেল। তবুও আমরা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে বর্ষার মরশুমে পায়ের ছাপ নেব। সেই সঙ্গে ট্র্যাপ ক্যামেরার মাধ্যমে ওই জোড়া চিতাবাঘ এক ফ্রেমে ধরা দেয় কিনা, সেই নজরদারি চলছে ধারাবাহিকভাবে।” সর্বপ্রথম চলতি বছরের ২২শে ফেব্রুয়ারি রাত ন’টা ৫১মিনিটে ওই ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল হৃষ্টপুষ্ট চিতাবাঘটি। তার ঠিক দু’মাস পরে ২০ এপ্রিল রাত ৭ টা ২০ মিনিটে ফের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দেয় ওই পুরুষ চিতাবাঘটিই।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই জাবর গ্রামের জঙ্গলে বনজ সম্পদ কুড়োতে গিয়ে জোড়া চিতাবাঘের সঙ্গে শাবক দেখেছিলেন এক মহিলা। যদিও ওই বন্যপ্রাণের চোখে পড়েননি মহিলা। কোনক্রমে জঙ্গল থেকে পালিয়ে বেঁচেছিলেন তিনি। তারপর থেকে এলাকায় চাউর হয়ে যায় সিমনি বিটের জাবর পাহাড়-জঙ্গলে জোড়া চিতাবাঘ রয়েছে। পুরুলিয়া বনবিভাগ প্রথম থেকেই এই জোড়া চিতা বাঘের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়নিl এবার সেই সম্ভাবনাই সত্যি হয়ে গেলl সেইসঙ্গে সিমনি বিটের জঙ্গলে এই জোড়া চিতাবাঘ প্রমাণ করে দিল কোটশিলা বনাঞ্চলের জঙ্গল ক্রমশ বাড়ছে। তাছাড়া চিতাবাঘের নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের পরিবেশও তৈরি হয়েছে এই বনাঞ্চলে। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া এই জোড়া চিতাবাঘের ছবি এলাকার বাসিন্দারা দেখতে পাওয়ায় জাবর গ্রামের বাসিন্দা রামবিলাস হেমব্রম বলেন, “বনদফতরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় জোড়া চিতাবাঘের ছবি দেখতে পেয়েছি। দুটি চিতাবাঘ আমাদের জাবর গ্রামের পাহাড়-জঙ্গলেই রয়েছে। মাঝেমধ্যে গরু, ছাগল খেয়েই চলেছেl তবুও আমরা চাই ওই দুটি বাঘ এই জঙ্গলে ভালভাবে থাকুক। এখন বর্ষায় গোপন জীবনযাপনের সময় আমরা সেভাবে জঙ্গলেও যাচ্ছি না।” হয়তো গ্রামবাসীদের এমন বার্তাতেই প্রায় গত দু’বছর ধরে গবাদি পশু,বন্য শুয়োর শিকার করেই যাচ্ছে ওই জোড়া চিতাবাঘ। তবে তা নিয়ে গ্রামবাসীদের মৃদু ক্ষোভ-বিক্ষোভও নেই। কোটশিলা বনাঞ্চলের দাবি, বন্যপ্রাণ নিয়ে বনদফতরের ধারাবাহিক সচেতনতারই সুফল। তবে এই জোড়া চিতাবাঘ শুধু কোটশিলা বনাঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। লাগোয়া ঝাড়খন্ডের বোকারো রেঞ্জের যুগিডি, আড়াসারাম, ত্রিয়নালা এলাকাতেও এই জোড়া চিতাবাঘ রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।