একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বাংলায় ক্রমাগত পর্যুদস্ত হয়ে আসছে বিজেপি। একের পর নির্বাচনে হার, আভ্যন্তরীণ কোন্দল, সাংগঠনিক দুবর্লতা, নেতাদের দলত্যাগ, এ সব কিছুর চাপে পড়ে কার্যত বেহাল দশা গেরুয়াশিবিরের। উপনির্বাচনগুলিতেও তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে বিজেপি। বাংলায় দলের এই অবস্থা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রীতিমতো চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের মঞ্চেও পড়েছে এর আঁচ। শনিবার হায়দ্রাবাদে দলের কর্মসমিতির বৈঠকের আগে দলীয় পদাধিকারীদের বৈঠক হয়। সেখানেই চলতি বছরে উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ও সাম্প্রতিক উপ-নির্বাচনের দলের জয়ের বিষয়ে আলোচনায় বাংলার প্রসঙ্গও উঠে আসে বলে সূত্রের খবর। বৈঠকে বঙ্গের নেতাদের বহু অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। দেশের বাকি অংশে দল এগোলেও বাংলায় কেন পিছিয়ে চলেছে, সেই বিষয়টিও উঠে আসে তখন। প্রশ্ন ওঠে, দলের পুরানো কর্মীরা কেন কাজ করছেন না? শুধুমাত্র রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া দলীয় কর্মসূচিতে দলের অন্য কোনও নেতাকে সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে না কেন? রাজ্য বিজেপি কেন কোনও কর্মসূচীকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে সফল হচ্ছে না, বা তাতে কি গাফিলতি রয়েছে সে বিষয়েও উক্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির রিপোর্টের উপর আস্থা রেখেই বিজেপি দুশোর বেশি আসন পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এবং তা রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তাই এবার যাতে তারা বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে সঠিক তথ্য দেয় সেদিকে নজর দেওয়ার জন্যও বৈঠকে উপস্থিত রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিদের সতর্ক করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। বাংলায় তারা কী লাইন ধরে এগোতে চাইছেন সেই প্রশ্নও বৈঠকে উপস্থিত সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী এবং কেন্দ্রীয় পদাধিকারী হিসেবে সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সম্পাদক অনুপম হাজরাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই সময়ই রাজনৈতিক হিংসার দোহাই দেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। এদিন বিকেলে কর্মসমিতির বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বাংলা-কেরলে বিজেপি কর্মীদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। পরে সাংবাদিক সম্মলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “নাড্ডাজি বাংলার অবস্থা নিয়ে সংবেদনশীল। বাংলা এবং কেরলে আমাদের কর্মীদের যেভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তাতে সেখানকার সাধারণ নাগরিকরাও ত্রস্ত হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখও করেছেন। সেখানকার কর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আইন যাতে নিজের পথে চলে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে বলে বার্তা দিয়েছেন।” বাংলায় বিজেপির হাতে যে কোনও ইস্যু নেই তার প্রমাণ রাজনৈতিক হিংসার উল্লেখ থেকেই বোঝা গিয়েছে। কারণ, গত বছরের ৭ই নভেম্বর দিল্লীতে বিজেপির একদিনের কর্মসমিতির বৈঠকেও এই একই ইস্যু উঠেছিল বাংলা নিয়ে আলোচনায় এবং রাজনৈতিক প্রস্তাবেও তা উল্লেখ করা হয়েছিল। এবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। যথারীতি, দুঃসময় অব্যাহত বাংলার পদ্ম-ব্রিগেডের।