ইতিমধ্যেই করোনা অতিমারীর জেরে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান। হু-এর দাবি, ভারত সরকার যে সংখ্যা দেখাচ্ছে, প্রাণ গিয়েছে তার নয়গুণ বেশি মানুষের। আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বিরোধ মীমাংসার আগেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি করা আর একটি পরিসংখ্যান তাদেরই একটি সমীক্ষায় প্রাপ্ত হিসাবের পর গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখীন। বিতর্কের বিষয় দেশে জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্ত বা রেজিস্ট্রেশনের হার। দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক নরেন্দ্র মোদীর জমানার সুফল দাবি করতে গিয়ে বলে দেশে ৯৯.৯ জন্ম-মৃত্যু সরকারের কাছে নথিভুক্ত হচ্ছে। আর তা সম্ভব হয়েছে রেজিস্ট্রেশনের পরিকাঠামো গড়ে তোলায়। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তত্ত্বাবধানে ওই কাজ করে থাকে পঞ্চায়েত ও পুরসভা। ওই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (এনএফএইচএস)। ওই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্তির হার ৭১ শতাংশ। ২০২০ তে আরও কম ছিল।
উল্লেখ্য, বিরোধীরা এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও নানা ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই মোদী সরকারের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার কারচুপি করছে। এই ব্যাপারে গোড়া থেকেই সরব কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের করা এনএফএইচএস নমুনা সমীক্ষা হলেও তাদের পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাদের প্রাপ্ত তথ্যকে সামগ্রিক চিত্র ধরে এগোয় সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং রাজ্যগুলির স্বাস্থ্য দফতর ওই সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত পদক্ষেপ করে থাকে। এনএফএইচএস-এর সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমীক্ষা চলাকালে ১২টি রাজ্য জানায় জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্তির কাজ ভালভাবে করতে পারছে না লোকবলের অভাবে। আবার উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্য জানিয়েছে করোনার জন্য ওই কাজে ভাটা পড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ২০২০-র বড় সময় ধরে লকডাউন ছিল। আবার অফিস-কাছারি খোলার পরও মানুষ সেখানে গিয়েছেন কম। যে কারণে পরের দু বছর নথিভুক্তির হার বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তার কথায় করোনার সময় অনেক প্রসূতি সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে যাননি। প্রত্যন্ত গ্রামের প্রসূতিদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও থমকে গিয়েছিল। ফলে বাড়িতে জন্ম নিয়েছে বহু শিশু। সেগুলি তখন নথিভুক্ত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একই কথা প্রযোজ্য বহু মৃত্যুর ক্ষেত্রে। শ্মশান, কবরস্থানে সংক্রমণের আশঙ্কায় অন্ত্যেষ্টি করেননি অনেকে।
