রামপুরহাটের হরিওকা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী কুমুদরঞ্জন মণ্ডল। তাঁর পুত্রবধু সন্তানসম্ভাবা ছিলেন। গত ৩০ এপ্রিল তাঁর ডেলিভারি ছিল। পুত্রবধূ বাপের বাড়িতেই ছিলেন। কুমুদরঞ্জনের স্ত্রী অপর্ণা চলে গিয়েছিলেন সেখানে। যাওয়ার আগে বাড়ির চালের টিনের ভিতর রেখে গিয়েছিলেন ছ’ভরি সোনার গয়না। বাড়িতে কয়েকদিন একাই ছিলেন কুমুদবাবু। এর মধ্যেই একদিন রেশনের চাল স্থানীয় একটি দোকানে বিক্রি করে দেন তিনি। যার ভিতরে ছিল প্রায় চার লক্ষ টাকার গয়না।
ভেবেছিলেন সর্বস্ব চলে গেল। স্বামীর কাণ্ডে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন স্ত্রী। চারিদিকে অবিশ্বাসের বাতাবরণে মনেও হয়নি খোয়ানো জিনিসগুলো ফেরত পেতে পারেন। কিন্তু সেটাই হল। কুমুদরঞ্জন মণ্ডল আর অপর্ণা মণ্ডলের সারাজীবনের সঞ্চয় ফিরিয়ে দিল মসজিদ কমিটি। বরকত আলি, জাহেরুন্নেসা বিবিদের দেখে কুমুদরঞ্জন, অপর্ণা বুঝলেন—সততা এখনও আছে।
গোটা বিষয়টি বলেন। বরকত আলি জানান, তিনি ওই গয়নার প্যাকেট পেয়েছেন। একজন চাল ওজন করার সময়ে তাঁর বলে দাবি করেছিলেন, কিন্তু তিনি দেননি। আড়তের ভ্যানচালকও বলেন, তাঁরা বুঝেছিলেন কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে। বরকত কুমুদবাবুকে জানান, শনিবার সকালে এলে ওই প্যাকেট তিনি তাঁর হাতে তুলে দেবেন।
কারণ ওটা বাড়িতে রাখা রয়েছে। এদিন বরকতের স্ত্রী ওই প্যাকেট নিয়ে আড়তে আসেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকজন। তাঁরাই কুমুদবাবুর হাতে তুলে দেন গয়নাভর্তি প্যাকেট।
কুমুদরঞ্জন বলেন, “আমি তো ভাবিইনি ওগুলো পাব। ভেবেছিলাম আমার সব গেল। কিন্তু এখনও সততা বেঁচে আছে। আমি ওঁদের বকশিসও দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা নেননি। আমি বরকতদের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব।”
এরপর স্ত্রী ফেরার পরও ব্যাপারটা জানা যায়নি। কারণ, অপর্ণাদেবীর বাবার বাৎসরিক কাজের জন্য ফের তাঁরা কয়েকদিনের জন্য চলে গিয়েছিলেন। ফেরেন গত ৫ মে। গতকাল কুমুদরঞ্জন এবং অপর্ণা দুজনে ভাত খাচ্ছিলেন। সেইসময়ে একজন ভিক্ষুক আসেন। গেরস্থ বাড়ি। দুপুরে খাওয়ার সময়ে কেউ এলে তাঁকে ফেরাতে নেই। তাই অপর্ণা দু’মুঠো চাল দেওয়ার জন্য উঠে গিয়ে দেখেন টিনটাই নেই।
জিজ্ঞেস করেন স্বামীকে। কুমদবাবু জানান, ওই চাল তিনি আড়তে বেচে দিয়েছেন। অপর্ণা জানতে চান চালের টিনের মধ্যে যে গয়নার একটা প্যাকেট ছিল, সেটা কোথায়? কুমুদবাবু জানান, তিনি টিন সমেত দোকানে দিয়ে এসেছেন। ভিতরে যে গয়নার প্যাকেট ছিল তিনি জানতেন না। শুনেই কান্নাকাটি জুড়ে দেন অপর্ণা। কোনওরকমে খাওয়া শেষ করে কুমুদ সাইকেল নিয়ে যান বরকত আলির আড়তে।