অবশেষে সিপিএম ছাড়লেন অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাস। সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদই রিনিউ করলেন না তিনি। অজন্তা যে সিপিএমে আর থাকবেন না তা এক প্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল গত আগস্ট মাসের ২২ তারিখ। তারপর শুধু আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদটা বাকি ছিল। এবার তাও হয়ে গেল। গত জুলাই মাসের শেষে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’ পত্রিকায় উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছিলেন অজন্তা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা তাঁর লেখায় তুলে ধরেছিলেন, বাংলার রাজনীতিতে নারী শক্তির ভূমিকা। সেখানে বাম ও কংগ্রেস নেত্রীদের ভূমিকার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরাজ প্রশংসা করেছিলেন অনিল-কন্যা। মমতাকে জননেত্রী বলেও উল্লেখ করেছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন এসএফআই নেত্রী।
স্বাভাভিকভাবেই ওই ঘটনার পর তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল সিপিএমে। অনিল বিশ্বাসের মেয়ে মমতাকে জননেত্রী বলছেন? যাঁর বাবা ‘গণশক্তি’কে নতুন রূপ দিয়েছিলেন, সাংবাদিক থেকে পার্টির রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য হয়েছিলেন, তিনি কি না কলম ধরছেন জাগোবাংলার জন্য? কমিউনিস্ট পার্টিতে যা হয়, তাই হয়েছিল অজন্তার ক্ষেত্রেও। প্রথমে শোকজ করে দল। তার জবাব দেওয়ার পর কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে একাংশ বলে, অজন্তাকে বহিষ্কার করতে হবে। পাল্টা আর একটা অংশ বলে, তিন মাস সাসপেন্ড করা হোক অজন্তাকে।
শেষমেশ সম্পাদকমণ্ডলী অজন্তাকে তিন মাস সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা যখন জেলা কমিটির বৈঠকে পেশ হয় তখন আবার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে সায় দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। বলা হয়, তিন মাস নয়, অজন্তা যে কাজ করেছেন তার জন্য ছ’মাস সাসপেন্ড করা হোক। অজন্তার পার্টি সদস্যপদ ছিল কলকাতা জেলা কমিটির অন্তর্গত অধ্যাপক শাখায়। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চ মাসে পার্টি সদস্যপদ রিনিউয়ালের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসের জন্য স্ক্রুটিনির কাজ করতে এবার একটু দেরি হয়েছে। সদ্য সেই স্ক্রুটিনির কাজ শেষ করেছে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন। তাতে দেখা যাচ্ছে অজন্তা রিনিউ করেননি। অর্থাৎ প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময়ে ছাত্র ফ্রন্ট থেকে পার্টিতে আসা অজন্ত প্রায় দু’দশক পর পার্টি মেম্বারশিপ ছেড়ে দিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, সিপিএমের নেতানেত্রীদের ছেলেমেয়েদের রাজনীতিতে আসার চল নতুন নয়। অজন্তা যখন প্রেসিডেন্সিতে এসএফআই করতেন সেই সময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনাও সেখানকার এসএফআই নেত্রী ছিলেন। সে বছর এই দুই নেতার কন্যার হাত ধরে অনেক দিন পর প্রেসিডেন্সির ছাত্র ইউনিয়ন জিতেছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠনটি। পরবর্তীকালে এই প্রেসিডেন্সিতেই এসএফআই করেছেন গৌতম দেবের ছেলে সপ্তর্ষি দেব, মানব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে হিয়া মুখোপাধ্যায়রা। অজন্তার এ ভাবে নিঃশব্দে সরে যাওয়া সিপিএমের অনেকের কাছেই অস্বস্তির। এমনিতে গত এক দশকে বাংলায় সিপিএমের পার্টি সদস্যপদ ক্রমাগত কমছে। দুর্বল হচ্ছে সংগঠন। তার মধ্যে এবার পার্টির সদস্যপদ ছাড়লেন অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা। যা খানিকটা হলেও মাথাব্যথা বাড়াল বামশিবিরের।