গত দু’-বছরে দেশে মহামারী পরিস্থিতির কারণে গ্রামীণ এলাকায় ১০০ দিনের কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামের ফেরত এসেছিল। যাদের মধ্যে অনেকেই আর কর্মস্থলে ফিরে যাননি। কেন্দ্রের তরফ থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম(মনরেগা)-এর আওতায় পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে একাধিকবারই আশ্বাসবাণী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে এই প্রকল্পে কাজ মিলছে ৫০ দিনেরও কম। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পটিতে বরাদ্দ কমছে বলেই কাজের দিনের সংখ্যা কমছে, অভিযোগ বিরোধীদের।
প্রসঙ্গত, মনরেগায় সুবিধা পাওয়ার যোগ্য প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারকে বছরে ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সম্প্রতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কাজের দিন বাড়িয়ে ১৫০ করার সুপারিশও করেছে। অথচ ২০২১-’২২ আর্থিক বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, মনরেগা-য় গ্রামীণ এলাকায় গড়ে পরিবার পিছু মাত্র ৫০ দিনের কাজ হয়েছে। কমিটি যেখানে কাজের দিন বৃদ্ধির সুপারিশ করছে, সেখানে কেন্দ্র লক্ষ্যমাত্রাই পূর্ণ করতে পারছে না। তারা মাত্র অর্ধেক দিন কাজ দিয়েই দায়িত্ব সারছে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠছে যে মনরেগা-য় বরাদ্দ কাটছাঁটের ফলেই কি এই পরিস্থিতি?
সবসময়েই দেখা গিয়েছে যে, সরকার মনরেগায় প্রথমে বাজেট বরাদ্দ কম রাখে, পরে বাড়ানো হয়। ২০২১-২২ আর্থিক বছরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথমে বাজেটে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরে তা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে সেই প্রক্রিয়ায় প্রকল্পের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন মনরেগা সংগ্রাম মোর্চার সদস্য দেবমাল্য নন্দী। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের শুরুতে বরাদ্দ কম হলে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যেই ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ খরচ হয়ে যায়। পরে তা বাড়ানো হলেও তাতে অনেক সময় চলে যায়, এতে পেমেন্ট আটকে যায়। কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।’
দেশে করোনা অতিমারীর ফলে তৈরি হওয়া আর্থিক দুরবস্থা থেকে গ্রামীণ মানুষ যে এখনও উদ্ধার পায়নি ১০০ দিনের কাজের পরিসংখ্যান সেইদিকেই ইঙ্গিত করছে। আগের আর্থিক বছরের (২০২০-’২১) তুলনায় ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে মনরেগা-য় কাজ পাওয়া পরিবারের সংখ্যা কমেছে। ২০-’২১ আর্থিক বছরে দেশের সাত কোটি ৫০ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করলেও গত আর্থিক বছরে তা কমে সাত কোটি কুড়ি লক্ষ পরিবারের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। ২০-’২১ সালের তুলনায় ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে কর্মদিবস সাত শতাংশ কমে গিয়েছে।