বছর ছয়েক আগে সবই ছিল পতিত জমি। তবে তৃণমূল সরকারের আনা উন্নয়নের জোয়ারে একদা মাওবাদীদের উপদ্রুত লালগড়ের রতনপুরের ছবিটাই যেন বদলে গিয়েছে। এলাকার ৫০০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে কাজু, পেয়ারা আর আমের। শুধু তাই নয়। গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু জমি রয়েছে, সেখানে এখন তিল, সরষের চাষও হচ্ছে। জমির ধার ঘেঁষে বসানো হয়েছে সোনাঝুরি। বছর কুড়ি পার করলে সেই কাঠ বেচেও ভালো আয় হবে। আর তাই এলাকার বাসিন্দা পরিমল হাঁসদা, মোহন হাঁসদারা আর পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে পাড়ি দেন না ভিন রাজ্যে। চাষ করেই সুখে-শান্তিতে দিন কেটে যাচ্ছে তাঁদের।
আবার বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের কাঁকো গ্রামের চঞ্চল দণ্ডপাটের আড়াই বিঘা জমিতে বছর দশেক আগে ২০ কুইন্টাল ধান হতো। দাম মিলত কুইন্টাল পিছু গড়ে হাজার টাকা। এখন দেড় বিঘা জমিতে ১৫ কুইন্টাল ধান ফলে। দাম মেলে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। বাকি এক বিঘায় বছরে এক লাখের করোলা। চঞ্চলবাবুরা বলছিলেন, ‘এই জমিতে যে করোলা, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়শ বা সূর্যমুখীর চাষ হতে পারে, কল্পনাও করিনি।’ স্থানীয় বাজারে ২২ টাকা কেজিতে করোলা বিক্রি হয়। সেখানে টাটানগর, বোকারো বা রাঁচিতে গিয়ে ৩০ টাকায় ফসল বেচে আসেন চঞ্চলবাবুরা।
প্রসঙ্গত, বাংলার কৃষকদের আয় দুই বা তিনগুণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন তিনি। যার অধীনে পশ্চিমের জেলাগুলিতে কৃষি ও পশুপালন ভিত্তিক আয়ে জোর দিয়েছে রাজ্য। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আবার, সরকারি কৃষক বাজারে কম খরচে পণ্য নিয়ে যেতে পারছেন চাষিরা। আর তাই হাসছে জঙ্গলমহল। সেখানের বেলপাহাড়ী, শিলদার মতো সন্ত্রাস আর আতঙ্কের গ্রামগুলিতে তাই এখন অন্য বাতাস।