বর্তমানে বগটুইকাণ্ড নিয়ে উত্তপ্ত বাংলা। উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। চর্চা-তরজার বিষয় হয়ে উঠেছে বগটুই। হত্যা-পাল্টা হত্যার বগটুইয়ের ঘটনাকে হাতিয়ার করেই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে নেমে পড়েছে বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন। বাংলার ধর্মীয় সম্প্রীতিকে নষ্ট করে, ফের একবার বঙ্গে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা পেতে চাইছে বিজেপি।
বিভিন্ন টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের মৃত্যুর পর একদল উত্তেজিত মুসলমান জনতা হিন্দুদের বাড়ির মধ্যে ঢুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে। ওই ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে, একটি বাসের পাশে রাস্তার মধ্যেই বেশ কিছু অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বাংলায় রাষ্ট্রপতিশাসন জারি করার জন্য অনুরোধও করা হচ্ছে, পোস্টদাতাদের তরফে। এর সঙ্গেই অভিযোগ করা হচ্ছে, বাংলায় নির্বাচনের সময় লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে এবং অনেক হিন্দু মহিলার ধর্ষণ করা হয়েছে। আরও একটি টুইটে দাবি করা হচ্ছে, বাংলার ঘটনায় হিন্দুরা মারা গিয়েছে। বিভিন্ন টুইটার হ্যান্ডেল থেকে হিন্দিতে ক্যাপশন লেখা হচ্ছে।
এবার আসা যাক সত্যিতে। এই ভাইরাল ভিডিওদুটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। দাবি করা হচ্ছে, এক বীরভূমে হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ভুয়ো দাবি হল ভিডিওটি বীরভূমের। হিংসার ঘটনাকে সম্প্রদায়িকতার দাগ লাগিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। বীরভূমের বগটুইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ও আক্রান্ত; দু’পক্ষই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ভিডিওর কিছু অংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভিডিওটি উড়িষ্যার একটি বাস দুর্ঘটনার ভিডিও। জাগরণ নামের একটি সংবাদপত্রে ওই বাস দুর্ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সালে। খবরে যে বাসের ছবি দেখা গিয়েছিল, ওই একই বাসের ছবি ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে। একই বাস দুর্ঘটনার খবর একটি ইউটিউব লিংকেও পাওয়া যাচ্ছে। ওই ইউটিউব ভিডিও রিপোর্টের শিরোনাম, “গঞ্জামে একটি বাস ১১কে ভি লাইভ তারের সংস্পর্শে আসার কারণে বাসে থাকা ৯জন যাত্রী মারা গিয়েছে, অনেকেই গুরতর আহত হয়েছেন।” সাম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই দুর্ঘটনার ভিডিওই দেখা যাচ্ছে। কনক নিউজের তরফে ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সালে ওই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল।
এবিষয়ে এক সর্বভারতীয় বেসরকারি সাংবাদমাধ্যমের মতে, ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ তারের সংস্পর্শে আসার কারণে উড়িষ্যার চিকিটি ব্লকের দাঙ্কালপাডু গ্রামে একটি বাস দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয় এবং ১৯ জন আহত হয়। সেই ঘটনাকেই বীরভূমের বগটুইয়ের ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। অতএব, ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে বীরভূমের কোন সম্পর্ক নেই। উক্ত ভিডিওটি উড়িষ্যার বাস দুর্ঘটনার ভিডিও। বীরভূমের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতেই এমন মিথ্যাচার করা হচ্ছে।