দানা বাঁধল নতুন বিতর্ক। প্রত্যক্ষভাবে বিজেপির নামে না হলেও, গেরুয়া শিবিরের উদ্যোগেই বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া এক ঘটনাক্রমের উপর ভিত্তি করে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন হতে চলেছে কলকাতায়। জানা গিয়েছে, কলকাতায় শুরু হলেও, এরপর রাজ্যের বিভিন্ন শহরে ওই প্রদর্শনী নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবি নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির তরফে ওই ছবির প্রচারও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতারা দলে দলে যাচ্ছেন ওই ছবি দেখতে। দ্য কাশ্মীর ফাইলসের আবহেই, এই প্রদর্শনীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য বাংলাদেশ ফাইলস’।
উল্লেখ্য, ওই প্রদর্শনী আয়োজক হল ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’, আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। এই সংস্থার অন্যতম প্রধান মোহিত রায় আগে রাজ্য বিজেপির উদ্বাস্তু শাখার প্রধান ছিলেন। এখন রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কী ভাবে বাঙালি হিন্দুদের উপরে অত্যাচার হয়েছে তা নিয়ে ছবি ও লেখার মাধ্যমে একটি প্রদর্শনী হবে। যাদবপুর থেকে শুরু হলেও আগামী দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হবে এই প্রদর্শনী।” জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা বহু উদ্বাস্তু মানুষের বাস যেহেতু যাদবপুরে, তাই সেখানেই প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন হচ্ছে। এরপরেও জায়গা বাছার ক্ষেত্রে উদ্বাস্তুপ্রধান এলাকাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথম প্রদর্শনীটি হবে আগামী রবিবার যাদবপুরের পালবাজার এলাকায়। মোহিত রায় বলেন, “এই প্রথম বার বাঙালি হিন্দুর নিজভূমিতে গণহত্যার শিকার হওয়ার তথ্য নিয়ে এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে।” এটি বিজেপির কোনও উদ্যোগ নয় বলে দাবি করলেও মোহিত জানিয়েছেন প্রদর্শনীর আয়োজনের দায়িত্বে থাকবেন বিজেপির উদ্বাস্তু শাখার কর্মী-সমর্থকেরাই।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বর মাসেও দুদিনের জন্য একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য।’ তার নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘বেঙ্গলি হিন্দু জেনোসাইড।’ ১১ই ডিসেম্বর কলকাতায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের যামিনী রায় গ্যালারিতে ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার মোহিত বলেন, “ওই প্রদর্শনীটি হয়েছিল ১৯৪৬ সালে হওয়া নোয়াখালি গণহত্যার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে। তবে এ বার ছবি ও লেখায় যে প্রদর্শনীর আয়োজন হচ্ছে সেটিতে বেশি করে ধরা হবে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে হওয়া অত্যাচারের কাহিনি। সেই সময়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, অনেক নারী লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। ঘর, বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল বহু পরিবার।” সম্প্রতি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবির মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মহল। কলকাতায় প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া দ্য বাংলাদেশ ফাইলসের লক্ষ্য কি একই? উঠছে প্রশ্ন।