বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ-সহ ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে। আর তাতে পাঞ্জাব ছাড়া বাকি চারটি রাজ্যেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে বিজেপি। আর এই জয় সেলিব্রেট করতে দলীয় কর্মীদের উপচে পড়া ভিড় ঠেলে গোলাপ-গাঁদার পাপড়ি পায়ে দলে সদর দফতরে ঢুকছেন নরেন্দ্র মোদী। এ হেন উদযাপনের আসল উদ্দেশ্য হল, একটা ন্যারেটিভ তৈরি করা যে মোদী অপরাজেয়! কোভিড এবং তার জেরে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি, লক্ষাধিক মানুষের কাজ হারানো ইত্যাদি নেতি নেতি সত্ত্বেও মোদীর থেকে যে মানুষের মোহ-ভঙ্গ হয়নি সেটা লোককে দেখানো। যাতে এর রেশ থেকে যায় চব্বিশের লোকসভা ভোটেও। বাস্তব হল, এই ন্যারেটিভের কাউন্টার তথা পাল্টা বার্তা দেওয়ার মতো শক্তি এখন কংগ্রেসের নেই। কিন্তু তাই বলে চুপ থাকলেন না এই মুহূর্তে দেশের প্রধান বিরোধী মুখ। শুক্রবার মুখ খুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতকাল তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘একনায়কতন্ত্রের জোরে কয়েকটা রাজ্যে জিতেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে।’ তাঁর দাবি, ‘উত্তরপ্রদেশে ভোট লুঠ হয়েছে। এক জেলা শাসককে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি বলব, অখিলেশরা হতাশ না হয়ে যেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা চালিয়ে যায়।’ তিনি এ-ও বলেন, ‘এখন থেকে ২০২৪ -এর বাজনা বাজাতে শুরু করে দিয়েছে। শুধু ডুগডুগি বাজালে হবে না। আগামী দু’বছরে কী হবে কেউ বলতে পারে না। বাংলায় গো-হারা হেরেও লজ্জা নেই। ভবিতব্য আর গন্তব্যের মধ্যে ফারাক আছে।’ মমতার কটাক্ষ, ‘শিশু জন্মানোর আগেই তার অন্নপ্রাশনের দিন ঠিক করে দিচ্ছে বিজেপি! দু’বছর পর কারা সরকার তৈরি করবে তা কেউ জানে না।’ তিনি এ-ও বলেন, ‘ভোটে বিজেপির প্রতি জনপ্রিয়তার প্রতিফলন ঘটেনি। ভোট মেশিনারি জিতেছে। ইভিএমের ফরেনসিক পরীক্ষা করা দরকার। অখিলেশদের জোর করে হারানো হয়েছে।’
মমতার সাফ কথা, ‘উত্তরপ্রদেশের ফল নিয়ে বিজেপির উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সমাজবাদী পার্টির প্রাপ্ত ভোট শতাংশ ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। আগের তুলনায় ৭৮ টি আসন বেশি পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি। মানে বিজেপি জমি হারাচ্ছে।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার সমালোচনারও যথেষ্ট রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। তিনি হয়তো দিব্য বুঝতে পারছেন যে, উত্তরপ্রদেশের সাফল্য বাংলাতেও বিপণন করতে চাইবেন শুভেন্দু অধিকারী-দিলীপ ঘোষরা। বাংলায় জনমতকে প্রভাবিত করতে চাইবেন তাঁরা। আর তার পর লোকসভা ভোটে উনিশের নির্বাচনের মতোই আসন পাওয়ার চেষ্টা করবে বিজেপি। তাই তৃণমূল নেত্রী দলকে বোঝাতে চেয়েছেন, এখন থেকেই কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে। কেন্দ্রের সরকারের ব্যর্থতা, রাজ্যের প্রতি আর্থিক বঞ্চনা ও একনায়কতন্ত্রের নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে মানুষের কাছে। তাছাড়া রাজ্যের ভোট আর দেশের ভোট এক নয়।