সবদিক থেকেই ব্যর্থ রাজ্যের বিজেপি সরকার। এই অভিযোগে আজ, সোমবার ৭ মার্চ ত্রিপুরায় মিছিল করবে তৃণমূল। একাধিক দাবি নিয়ে এদিন পথে নামছে তারা। তোলা হবে বিপ্লব দেব সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের দাবি, রাজ্যের সামগ্রিক আইন শৃঙ্খলার চূড়ান্ত বিপর্যয়, প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতা কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের বাড়ি ঘর সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, মহিলাদের ওপর নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। রাজ্যের স্থবির পুলিশ প্রশাসন, মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা ও রাজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হচ্ছে।
রাজ্যের ভয়াবহ বেকার সমস্যা, শূন্যপদ পূরণ, বিকল্প কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ এবং কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনরত বেকারদের উপর ক্রমাগত নির্যাতন ও পুলিশি অত্যাচার বন্ধ করারও দাবি তুলেছে তারা। পাশাপাশি, কর্মচারী নির্ভরশীল রাজ্যে যেখানে নিয়োগ বন্ধ রেখে প্রতিদিন ছাটাই হচ্ছে, কর্মচারীদের ২৮ শতাংশ ডিএ, কেন্দ্রীয় হারে বেতন ভাতা, বিভিন্ন দফতরের অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করা, পিএসইউ কর্মচারীদের সরকারি কর্মচারীদের মতো সুযোগ সুবিধা দেওয়া, পেনশনপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন দ্বিগুণ করা এবং কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা দেওয়ার মতো একগুচ্ছ দাবি রেখেছে তারা।
ত্রিপুরায় গ্রাম-পাহাড়-সহ সর্বত্র পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিন পানীয় জলের দাবিতে পঞ্চায়েত অফিসে তালাঝুলানো সহ পথ অবরোধ করছেন স্থানীয় জনগণ। রাজ্যের প্রতিটা মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছে তৃণমূল। ১০৩২৩ শিক্ষকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা-সহ আত্মহত্যা করা ও মৃত্যু হওয়া শিক্ষকদের পরিবারের অন্তত একজনকে চাকরি দেওয়া নিয়েও সওয়াল করেছে তারা। তাদের আরও দাবি, রাজ্যের সব মহকুমা, জেলা,প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সব দুটি মেডিক্যালে কলেজে পর্যাপ্ত ডাক্তার,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার ভেঙে পড়া কৃষিক্ষেত্রের উন্নতি দরকার। পর্যাপ্ত সেচব্যবস্থার অভাবে অধিকাংশ জমি অনাবাদী পড়ে থাকছে। কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে না এবং দুর্নীতি হচ্ছে এসব কৃষিসামগ্রী বিতরণে। দুর্নীতিগ্রস্থ আধিকারিকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে বলেও সোচ্চার বাংলার শাসক দল। পাশাপাশি, রাজ্যের তফশিলি জাতিদের প্রকৃত জনসংখ্যা নিরূপণ করা-সহ লোকসভার একটি আসন তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষণ ও তফশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল-স্টাইপেন্ড বৃদ্ধি, প্রকৃত এসসি-দের সনাক্ত করে জাল এসসি সার্টিফিকেটধারীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে বলে দাবি তাদের।
তৃণমূলের আরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর বন্টন নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তারা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। সেইসঙ্গে ঘর নির্মাণের বরাদ্দ অর্থ তিন লক্ষ করা ও বরাদ্দ সব অর্থ অবিলম্বে রিলিজ করতে হবে। বিজেপিকে পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো রেগার মজুরি দিগুণ করা,বছরে ২০০ দিনের কাজ নিশ্চিন্ত করা-সহ রেগার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া, রাজ্যের ভেঙে পড়া রেশনিং ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রেশনশিপে ডাল, তেল, সয়াবিন-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে। এই সরবরাহ বৃদ্ধি ও নিশ্চিন্ত করার পাশাপাশি রেশনশপে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।