ফের সারা দেশকে পথ দেখাচ্ছে বাংলা। বিভিন্ন জটিল ও জটিলতর রোগের চিকিৎসাও আজ রাজ্যবাসীর হাতের মুঠোয়। সৌজন্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথী। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট থেকে ক্যান্সার চিকিৎসা, যে কোনও রোগের উপযুক্ত চিকিৎসার দরজা খুলে দিয়েছেন তিনি। ফলে ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়ছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের। গত এক বছরে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এই খাতে। গত অর্থবর্ষের তুলনায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবর্ষেই উপকৃত হয়েছেন প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ। স্বাস্থ্যদপ্তরে জমা পড়া দৈনিক পরিসংখ্যান থেকে এমনটাই জানা গিয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, মানুষের ঘরে ঘরে এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। বাংলার মধ্যে তো বটেই, ভিন রাজ্যে গিয়ে পর্যন্ত এই প্রকল্পের সুবিধা মিলছে। স্বপ্নের প্রকল্পের এই সাফল্যে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর তাঁর সরকার। আগামী দিনে পরিষেবার পরিধি বাড়াতে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় এই বিমার সুবিধা একটি নির্দিষ্ট মাসিক আয়ের মানুষের ক্ষেত্রেই বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোভিড অতিমারী সূচনাপর্বে কেউ যাতে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন, তাই প্রত্যেককে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করানোর জন্য সব থেকে বেশি ভিড় হয় প্রতিটি জেলায়। উপভোক্তার সংখ্যাও দু’কোটি ছাড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০২০-‘২১ সালে এই খাতে ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল রাজ্যের। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় কোষাগারে বিপুল চাপ বেড়েছে। কিন্তু তারপরও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য খরচ কমায়নি নবান্ন। উল্টে চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত সরকার ৩০০ কোটি বাড়তি ব্যয় করেছে। বহু ক্ষেত্রে এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসায় অনীহা প্রকাশ করেছিল বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোম। কিন্তু অভিযোগ সামনে আসতেই রাজ্য সরকার এই ইস্যুতে কড়া মনোভাব নেয়। ফলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা কোনও রোগীকেই ফেরাতে পারেনি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলি। আর যারা সরকারি নির্দেশিকা পালন করেনি, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হয়নি স্বাস্থ্যদফতর।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে খবর। উপকৃত কয়েক লক্ষ মানুষ। স্বাস্থ্যদফতরের রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন গড়ে চার হাজার রোগী কোনও না কোনও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আবার এক-আধ দিন সেই সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে পাঁচ হাজারের গণ্ডিও। চিকিৎসা বাবদ দৈনিক গড়ে পাঁচ কোটি টাকা করে খরচ হচ্ছে রাজ্যের। কোনও কোনও দিন সেটা ছাপিয়ে গিয়েছে ছ’কোটিও। যেমন গত সপ্তাহের পরপর দু’দিন দেখা মিলেছে এই প্রবণতার। খরচের পরিমাণ ২ কোটি ছাড়ায়নি এমন দিন হাতে গোনা। সাধারণ ছানি অপারেশন থেকে জটিল রোগের অস্ত্রোপচার সবই চলছে নিঃশব্দে। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। এমনটাই ইঙ্গিত বিশেষজ্ঞ মহলের।