বিগত ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বাংলার রাজনৈতিক মসনদে বসে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হবার পর থেকে বাংলায় একের পর এক বেড়েছে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে প্রায় ৪০০টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পান রাজ্যের মানুষ। এই সব প্রকল্পকে এক ছাতার তলায় এনে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও সুসংগঠিত করে পরিষেবা তরান্বিত করার কাজ হাতে নিয়েছে রাজ্য। যাতে মানুষের কাছে আরও সহজে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রস্তাবিত সেই প্রকল্পে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কও। কিন্তু, রাজ্যের এই প্রকল্প সামাজিকভাবে কতটা মানুষের উপকারে লাগছে, তা নিয়ে একটা সমীক্ষা করছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সেই সমীক্ষা শেষেই একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সেই রিপোর্ট ইতিমধ্যে নবান্নে জমা দিয়েছে তারা। শীঘ্রই তা পেশ হবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সর্বোচ্চ বোর্ডে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি। উল্লেখ্য, ‘জয় বাংলা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্কদের পেনশন ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য নানান সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প খুব বড় আকারে চালায় রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পগুলিকে পদ্ধতিগতভাবে আরও মসৃণ করে চালানোর জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দিয়ে সহায়তা করতে চায় বিশ্বব্যাঙ্ক।
তবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে কোনও প্রকল্পে সহায়তা দেওয়ার আগে, তার প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করে থাকে। এক্ষেত্রেও তাই প্রকল্পে সহায়তা করার আগে এর ফলে কোনও প্রাকৃতিক বা সামাজিক প্রভাব পড়বে কি না তা যাচাই করে দেখে নিল বিশ্বব্যাঙ্ক। ১৪ জানুয়ারি অর্থদফতর প্রকাশ করেছে এই সংক্রান্ত ডিসেম্বর ২০২১-এর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে। রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, এবার এই রিপোর্ট যাবে বিশ্বব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কাছে। তার উপর বিশ্লেষণ করেই ছাড়পত্র দেওয়া হবে অর্থ বরাদ্দে। সাধারণত বড় বাঁধ তৈরি বা যে প্রকল্পে মানুষকে পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যাপার থাকে, সেই ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দিক বিশেষভাবে মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে। এটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, তাই প্রাকৃতিক ঝুঁকি একেবারে নেই বললেই চলে। আর সামাজিক দিকে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেই বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট উঠে এসেছে। এই রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরদারিতে চলা ‘অভিযোগ প্রতিকার’ প্রক্রিয়ার ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। উল্লেখ করা হয়েছে যে জয় বাংলা প্রকল্পে জড়িত সমস্ত দপ্তরকেই ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইটস টু পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট ২০১৩ মেনে চলতে হয়। দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে জয়বাংলা নিয়ে আরও প্রচার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এই রিপোর্টে এবং অন্যান্য দফতরের পাশাপাশি শ্রমদফতর ও কৃষিদফতরকেও জয় বাংলা প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত করার কথা বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে এই দুই দফতরকে প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছে রাজ্য সরকার।