‘মানুষ থেকেই মানুষ আসে, বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়, আমিও মানুষ, তুমিও মানুষ তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়’। কবি শ্রীজাতর লেখা এই পংক্তিটি বরাবরই জনপ্রিয়। তবে সম্প্রতি নতুন করে এই পংক্তিটি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। কারণ কিছুদিন আগেই তা ব্যবহার করেছেন তৃণমূলের ‘বিতর্কিত’ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধ চলাকালীন কল্যাণ ওই লাইনদু’টি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। তবে এবার তা-ই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল কল্যাণের দিকে। এবার খোদ কবিই জানিয়ে দিলেন, যে লাইনদুটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ‘বিশেষ বার্তা’ দিতে চেয়েছিলেন কল্যাণবাবু, তা ভরা জনসভা থেকে অনেক আগেই উদ্ধৃত করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যাঁ, সেই অভিষেক, যাঁকে নেতা হিসাবে মানতে নারাজ তিনি। নিজের অজ্ঞাতে তাঁর পদাঙ্কই অনুসরণ করে ফেললেন কল্যাণ।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি তাঁর পংক্তিটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হতেই একটি ভিডিও বিবৃতি দিয়েছেন শ্রীজাত। তাতে তিনি বলেছেন, ‘যে পংক্তিটি নিয়ে এখন আবার চর্চা হচ্ছে, আমার লিখিত ‘আমিও মানুষ, তুমিও মানুষ তফাৎ শুধুই শিরদাঁড়ায়’ সেটি বেশ কয়েকবার রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্ধৃত হয়েছে। আমি যদি ভুল না করি, গত বছর গোড়ার দিকে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় তাঁর জনসভা থেকে এই পংক্তিটি উদ্ধৃত করেন। তখনও আমাকে সংবাদ মাধ্যমের যোগাযোগ করেছিলেন। এটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। তবে যখন লিখছিলাম, তখন আমিও বুঝিনি যে পংক্তিটি এত মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং রাজনীতির মঞ্চ থেকে এভাবে ব্যবহৃত হবে।’ অর্থাৎ নিজের বিবৃতিতে খোদ কবিই জানিয়ে দিলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে বহু আগেই তাঁর পংক্তিটিকে স্লোগানের আকার দিয়েছিলেন অভিষেক। অর্থাৎ, শিরদাঁড়ার যুদ্ধে অভিষেকের চেয়ে কল্যাণ অনেক পিছিয়ে।
উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর আগে ওই পংক্তি ব্যবহার করেছিলেন অভিযেক। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মতুয়া অধ্যুষিত ঠাকুরনগরে এক জনসভায় অভিষেক বলেছিলেন, ‘সিবিআইকে লেলিয়ে দিয়ে ভেবেছে আমাকে চমকাবে! যা পারবেন লাগিয়ে দিন! আপনার জেদ থেকে আমার জেদ দ্বিগুণ। আপনি বহিরাগতদের এনে বাংলা দখল করতে চান! আমি আপনাদের বের করব।’ এর পরেই শ্রীজাতের পংক্তি উল্লেখ করে অভিষেক বলেছিলেন, ‘আমিও মানুষ, তুমিও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়।’ এখানেই কল্যাণের থেকে অনেকটা এগিয়ে মমতার প্রধান সেনাপতি। কল্যাণ এক বছর পর যে বুলি আউড়াচ্ছেন, তা আগেই উচ্চারিত হয়েছিল তাঁর কন্ঠে। তাই কল্যাণ যতই অভিষেককে ‘নেতা’ মানতে অস্বীকার করুন না কেন। পরোক্ষে অভিষেকই কিন্তু তাঁর নেতা হয়ে উঠলেন। কারণ নেতার দেখানো পথে হেঁটেই শ্রীজাতর পংক্তিদুটি ব্যবহার করতে দেখা গেল তাঁকে। যদিও ডায়মণ্ড হারবারের সাংসদ যে দলের দু’নম্বর হওয়ার দাবিদার, একুশের ভোটেই তাঁর প্রমাণ দিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিধানসভা ভোটে মমতার মতো অভিষেকও কার্যত রোদে তেতেপুড়ে বাংলা চষে ফেলেছিলেন। আর তার ফসল ঘরেও তুলেছে দল। তাই অভিষেকের নেতৃত্ব এই মুহূর্তে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্নাতীত।