রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নতুন মাইলফলক যুক্ত হতে চলেছে ঝাড়গ্রামের এই প্রত্যন্ত অঞ্চল। কারণ এখানে দীর্ঘকাল ধরে লুকিয়ে ছিল এক অত্যাশ্চর্য পাহাড়। স্থানীয় মানুষের কাছে যা ‘খাদান ডুংরি’ নামে বেশি পরিচিত। এই ‘খাদান ডুংরি’-তে রয়েছে কয়েকটি রঙিন পাহাড়।
যেন কেউ বাহারি রঙ করে দিয়েছে এখানকার পাথরের উপরে। বাস্তবে তা কিন্তু নয়। সূর্যের আলো পড়তেই দেখা যাচ্ছে লাল, হলুদ, সাদা রঙের পাথর। সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের ওদলচুয়ার গ্রামের মধ্যে দিয়ে কিছুটা গিয়ে তারপর কয়েক’শো মিটার জঙ্গল পথ পেরিয়ে দেখা মিলবে এই ‘রঙিন পাহাড়ের’।
এই ওদলচুয়ার গ্রামেরই বাসিন্দা রাজেশ মাহাতো। এক মেডিকেল পরীক্ষার্থী, যিনি খুঁজে বের করেছেন এই আশ্চর্য রঙিন পাহাড়, তিনিই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রঙিন পাহাড়ের ছবি শেয়ার করে সকলকে চিনিয়ে দিয়েছেন বাংলার বুকে লুকিয়ে থাকা এই অদ্ভুত এলাকা।
ছোট ছোট পাহাড়, ডুংরি, ঝর্ণা, সবুজ বনভূমি ও পাখির কলরবে বেলপাহাড়ি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ডেস্টিনেশন। এরমধ্যে নতুন আবিষ্কৃত রঙিন পাহাড় এক অন্যমাত্রা যুক্ত হল। যা আগামীদিনে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিস্টদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজিমের কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, এই মুহূর্তে বেলপাহাড়িতে যে সাতটি পর্যটনস্থল রয়েছে। যেগুলি দেখতে দেড় দিন লাগে। তবে আরও একদিন থাকলে ছোট ছোট টিলা-ডুংরির সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।
তিনি আরও জানান, শুধু এই ‘রঙিন পাহাড়’ নয় কাঁকড়াঝোড়ের চাতন ডুংরি, লাট্টু পাহাড়, কানাইসর পাহাড়, পবন পাহাড়, গজডুংরি, চাতন ডুংরি, বোদাডিহি ভ্যালি ভিউ পয়েন্টের মতো অসংখ্য জায়গা আছে যা আগামীদিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
এরজন্য পর্যটন দফতর নতুন পর্যটনস্থল গুলির পরিকাঠামো উন্নতি করছে। যাতে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বেলপাহাড়ি। ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম সম্পাদক শিবাশীষ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রামের মূল সৌন্দর্য এই বেলপাহাড়িতে।
আমরাও নিজেদের উদ্যোগে এই নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রগুলির বিজ্ঞাপন করছি। নতুন আবিষ্কৃত রঙিন পাহাড় বা খাদান ডুংরি নিয়েও প্রচার করবো। যারা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম পছন্দ করেন, তাঁরা অবশ্যই আসুন। বেলপাহাড়ি আপনাদের নিরাশ করবে না।
জানা যায়, সুদূর অস্ট্রেলিয়ার পাহাড়ের সঙ্গে এই অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে বেলপাহাড়ির ‘খাদান ডুংরি’-র বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। তাই বলাই বাহুল্য, আগামীদিনে এই ‘খাদান ডুংরি’ পর্যটকদের কাছে দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
বেলপাহাড়ির রাজেশ মহাতো জানিয়েছেন, একেবারে রঙিন পাথর দিয়েই তৈরি এই পাহাড়! আমি নিজেও দেখে অবাক হয়েছি। বেলপাহাড়ির অপরূপ এই জায়গা পর্যটকদের কাছে এখনও অজানা। তাই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রঙিন পাহাড়ের পরিচয় করিয়ে দিলাম ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের সঙ্গে।
তিনি আরও জানান, আশা করছি আগামীদিনে বেলপাহাড়ির এই রঙিন পাহাড় ঝাড়গ্রামের পর্যটনে নতুন পালক হিসেবে উঠে আসবে। রাজেশ আরও বলেন, ‘ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছি এধরনের পাহাড় বিশ্বে একমাত্র রয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে।
যেখানে পাহাড়ের উপর সূর্যের আলো পড়লে পাথরের রঙ পরিবর্তন হয়। তবে এই খাদান ডুংরি একেবারেই রঙিন পাথর দিয়ে তৈরি। যার উপর সূর্যের আলো পড়লে রঙের ছটা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
বেলপাহাড়ি এলাকাটা এমনিতে পাহাড়, ডুংরি, ঝর্ণার ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সুন্দর। করোনা আতঙ্কের আগে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত ঠিকানা হয়ে উঠেছিল।