গত ১৩ ডিসেম্বর ছিল গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়াত মনোহর পারিক্করের জন্মদিন। আর ঘটনাচক্রে সেদিনই গোয়ায় তাঁর প্রথম জনসভাটি করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন জনসভা শুরুর ঘণ্টা কয়েক আগে টুইটে পারিক্করকে স্মরণ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। যা সাড়া ফেলে দিয়েছিল ভোটমুখী গোয়ার রাজনৈতিক মহলে। বোঝা গিয়েছিল, বছর আড়াই আগে প্রয়াত পারিক্করকে নিয়ে গোয়াবাসীর আবেগ কতটা। সেই পারিক্করকে ছাড়া এই প্রথম গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে বিজেপিকে। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্তের নেতৃত্বে লড়াই করবে দল। এই পরিস্থিতিতে দলের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে, ২০১৭-র পুনরাবৃত্তি হলে তখন কী হবে? কে সামাল দেবেন উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি?
প্রসঙ্গত, ২০১২-র বিধানসভার ৪০ আসনের মধ্যে ২১টি পেয়েছিল বিজেপি। সেই প্রথম দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইয়ে দিয়ে সরকার গড়েছিলেন পারিক্কর। ভোটের আগে বিপুল সাড়া ফেলেছিল বিরোধী দলনেতা পারিক্করের জনসংযোগ অভিযান। কিন্তু ব্যক্তিগত আপত্তি সত্ত্বেও দলের নির্দেশে ২০১৪-তে মোদীর মন্ত্রিসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। গোয়ার রাজনীতিতে পরিক্করের অনুপস্থিতির ফল ভুগতে হয় দলকে। ২০১৭-র ভোটে বিজেপির প্রাপ্ত আসন কমে দাঁড়ায় ১৩। সবচেয়ে বেশি, ১৭টি আসন পায় কংগ্রেস। কিন্তু শেষমেশ আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে কংগ্রেসের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিকেশ করে দেন পারিক্কর। বস্তুত তাঁর ডাকে সাড়া গিয়ে আঞ্চলিক দল এবং নির্দল বিধায়কেরা বিজেপিকে সরকার গড়তে সমর্থন করে। সরকার টিকিয়ে ফেলেন পারিক্কর। পরে কংগ্রেসের ১০ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেয়।
২০১৭-র তুলনায় ২০২২-এর পরিস্থিতি বিজেপির জন্য যথেষ্ট অনুকূল বিরোধীদের ছন্নছাড়া অবস্থার কারণে। পাঁচ বছরে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা কমতে কমতে ১৭ থেকে হয়েছে দুই। প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো-সহ একাধিক প্রথমসারির নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই সুযোগে আঞ্চলিক দল এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ-ও কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ককে নিশানা করেছে। ফলে প্রধান প্রতিপক্ষকে নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয় গেরুয়া শিবির। তারা ভয় পাচ্ছে গোয়ার আঞ্চলিক দল ও নির্দলদের নিয়ে। ১৯৮৭ সালে রাজ্যের মর্যাদা পাওয়া ৪০ বিধানসভার রাজ্য গোয়ায় আঞ্চলিক শক্তি বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। একই ভাবে নির্দলদের সমর্থন করারও ঝোঁক আছে গোয়াবাসীর। ফলে কোনওভাবে ২১-এর গণ্ডি পেরতে না পারলে তখন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেটাই চিন্তার বিজেপির।