গত বুধবারই মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছর করার প্রস্তাবনা পাশ করা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। শীতকালাীন অধিবেশনেই এই বিল পেশ করার কথা। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবিত আইনকে সমর্থন জানালেও, বিরোধিতা করছে কংগ্রেস, সিপিএম, এআইএমআইএম সহ একাধিক দল। বিরোধী দলগুলির যুক্তি শুনতে, এই আইন নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারে কেন্দ্র, এমনটাই সূত্রের খবর। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়ায়, কেন্দ্রের তরফে সাংসদদের একটি প্যানেল তৈরি করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
এপ্রসঙ্গে এক প্রবীণ মন্ত্রী জানান, সরকার প্রস্তাবিত আইনের পর্যালোচনার বিরোধী নয়। সাংসদদের কমিটি প্রস্তাবিত বিলের সবকটি ধারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও তথ্য পর্যালোচনা করতে পারেন। বিরোধীরা সংসদে কী অবস্থান নিচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করেই এই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এমনটাই দাবি ওই মন্ত্রীর। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থেকে বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, “আমাদের সরকার দেশের মেয়ে-বোনেদের স্বাস্থ্য নিয়ে ক্রমাগত উদ্বিগ্ন থাকে। মেয়েদের অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে, সঠিক বয়সে তাদের বিয়ে হওয়া জরুরি।”
উল্লেখ্য, সংসদেও এই বিষয় নিয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধীদের। চলতি অধিবেশনেই এই বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ করানোর পরিকল্পনা থাকলেও, বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে সেই পদক্ষেপ বাধা পেতে পারে, এই আশঙ্কাও করা হচ্ছে। অধিবেশন শেষ হওয়ার আর মাত্র চারদিন বাকি রয়েছে, ইতিমধ্যেই লখিমপুর-খেরি কাণ্ড, ১২ সাংসদদের বরখাস্ত করাকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে বিরোধী দলগুলি। সংসদে অচলাবস্থা কাটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করার লক্ষ্যেই তাই প্রস্তাবিত আইন নিয়ে পর্যালোচনার জন্য সাংসদদের কমিটি তৈরি করতে পারে সরকার।
এই আইন সরাসরি পাশের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, “এই বিল নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ও সন্দেহ রয়েছে। বিলটি সংসদে পেশ করার আগে স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে বিলটি পর্যালোচনার জন্য পাঠানো উচিত।” অন্যদিকে, সিপিএমের তরফেও এই প্রস্তাবিত বিলের বিরোধিতা করা হয়েছে। তাদের দাবি, মেয়েদের বিয়ের বয়স না বাড়িয়ে কেন্দ্রের আগে নারীশিক্ষা ও পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া উচিত। এই বিষয়ে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “১৮ বছর বয়সী একজন মহিলা আইনত প্রাপ্তবয়স্ক। শুধুমাত্র বিয়ের জন্য তাঁকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে গণ্য করা আইনেরই বিরোধিতা করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকারকে লঙ্ঘন করছে এই প্রস্তাবিত আইন। এই আইনে মহিলাদের নিজেদের জীবনের গতিপথ নির্ধারণের অধিকার থেকেই বঞ্চিত করে।”