ফের বিতর্কের কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এদেশে বিজেপির শাসনকালে আকছার বিপন্ন হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। গণতন্ত্রের চতুর্থমাধ্যম হল সাংবাদমাধ্যম, সেই সাংবাদমাধ্যমের প্রধান কান্ডারি হলেন সাংবাদিকেরা। তারাই গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক, জনমত গড়েন, প্রশ্ন তোলেন। আজ তারাই আর নিরাপদ নন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র ভারতে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এলো রিপোর্টাস উইথআউট বর্ডারের (আরএসএফ) সাম্প্রতিক রিপোর্টে। দেশে নিত্য দিন সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। সাংবাদিক নিগ্রহ থেকে শুরু করে বিনা কারণে তাঁদের জেলবন্দি করে রাখা, আজকের ভারতে সবই রুটিনমাফিক চলছে। চলতি মাসের ১৪ তারিখ আরএসএফ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪৮৮ জন সাংবাদিককে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ৬০ জনকে নজরবন্দি করা রাখা হয়েছে। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলাইবাহুল্য জনস্বার্থে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে সাওয়াল করতেই এই আক্রমণ নেমে আসেছে সাংবাদিকদের উপর। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, প্রথমবারের জন্য এই বছরই এত বিপুল সংখ্যায় এই ধরণের আক্রমণের শিকার হয়েছেন মহিলা সাংবাদিকরাও।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র সরকারি হেফাজতে যারা রয়েছেন, সেই সব সাংবাদিকদেরই এই সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে ভারতের পরিস্থিতি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে সাংবাদিকদের এমন পরস্থিতির সম্মুখীন হতে হল। আরএসএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের পাঁচ সবচেয়ে বিপদজনক দেশের মধ্যে রয়েছে ভারতবর্ষ। মেক্সিকো, আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনের পরেই ভারতের স্থান চতুর্থ, তারপর রয়েছে পাকিস্তান। ২০২১সালে ভারতে চারজন সাংবাদিককে খুন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা হলেন, অবিনাশ ঝা, চেন্নাকেশাভালু এবং সুলাভ শ্রীবাস্তব। রিপোর্টটি জানাচ্ছে, মূলত উত্তরভারতের হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বিপদজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সর্বাধিক তাদের উপরেই এহেন আক্রমণ নেমে আসছে। ২০২১ সালে ভারতে যে চারজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন, তার মধ্যে তিনজনই এই হিন্দি বলয়ের। এই হিন্দি বলয়ের প্রায় প্রতিটি রাজ্যই বিজেপি শাসন করে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা একেবারের তথৈবচ। এই সব রাজ্যগুলি অসামাজিক কার্যকলাপের আঁতুরঘর, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতায় এগুলো আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অসামাজিক কার্যকলাপের বাড়বাড়ন্ত সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ক্রমাগত দুষ্কৃতীদের নজরে চলে আসছেন ও নানান ধরনের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা।