একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল গেরুয়াশিবির। তবে হয়নি আশাপূরণ। ভিনরাজ্য থেকে শয়ে শয়ে নেতাদের এনেও বিরাট বিপর্যয়ের সন্মুখীন হয়েছিল বিজেপি। যা নিয়ে পরবর্তীকালে টাকাপয়সার নয়-ছয় থেকে মহিলা ঘটিত কেলেঙ্কারির মতো অভিযোগও রাজ্য নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছিল। এবার কলকাতা পুরভোটের ১১ দিন আগেও নাজেহাল পদ্মশিবির। সংগঠন সাজানো দূরের কথা, আসন্ন ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের প্রচারের জন্য লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা প্রার্থীদের সঙ্গে প্রচারে তাঁর স্বামী-পুত্রকে দেখা যাচ্ছে। পুরুষ প্রার্থীদের পাশে হাতে গোনা কিছু আত্মীয় ভিড় করছেন। কোনও প্রচারেই সেভাবে দেখা যাচ্ছে না দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। অগত্যা প্রচারে এবার ভিন জেলা থেকে কর্মী ভাড়া করে আনছে দল। সোমবার বিজেপির সদর কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে লোকের ঘাটতি মেটাতে এই নিদানই দিয়েছে গেরুয়া-নেতৃত্ব। সূত্রের দাবি, হুগলী, হাওড়া, নদীয়া, ঝাড়গ্রাম সহ একাধিক জেলা থেকে এই কর্মীদের কলকাতায় নিয়ে আসছে বিজেপি। এক্ষেত্রে দলের যুব ও মহিলা শাখাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এদিন পার্টি অফিসের বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্য। দলের এহেন বেহাল দশা দেখে রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন সর্বভারতীয় বিজেপির আইটি সেলের প্রধান। রাজ্য নেতাদের প্রকাশ্যে বলেন, ভোটের আর ক’দিন বাকি। এখনও কলকাতায় ভোটের পরিবেশই তৈরি করতে পারেনি বিজেপি। নেতারা রাস্তায় নামছেন না। তাঁরা না নামলে কর্মী-সমর্থকরা কেন প্রচারে হাঁটবে? প্রশ্ন তুলে সবার আগে জেলা ও রাজ্য নেতাদের পুরোদমে ভোট প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন মালব্য। তৃণমূল যেখানে ভোট প্রচার প্রায় শেষ করে এনেছে, সেখানে বিজেপি এখনও কয়েক যোজন পিছিয়ে। বিজেপির প্রার্থীদের দেওয়াল লিখনও শুরু হয়নি। রাজ্য নেতারা বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামেননি, তার প্রমাণ মিলেছে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে প্রয়াত কাউন্সিলার তিস্তা বিশ্বাসের স্বামীকে টিকিট দেয়নি দল। যা নিয়ে প্রকাশ্যেই রাজ্য নেতাদের উপর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন একাধিক জাঁদরেল বিজেপি নেতা। এদিন দলের অন্যতম সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠক সরাসরি বলেছেন, ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির প্রার্থীর হয়ে তিনি প্রচারে যাবেন না। কারণ, প্রার্থী নির্বাচনের সময় তাঁকে এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। দৃশ্যতই দলের অন্দরের ভাঙন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজকমলবাবু দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা। কোনও বিষয়ে ওঁর আপত্তি থাকতেই পারে। তবে এবিষয়ে যা বলার দলের ভিতরে বললেই ভালো করতেন।” অন্যদিকে, এদিন রাতে আইসিসিআর হলে বিজেপি প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন নেতারা। সেখানেও বহু প্রার্থীরা হাজিরই হননি। প্রার্থীদের কথায়, “এখন প্রচার করব নাকি শুধু বৈঠক শুনব?” এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই শিরে সংক্রান্তি আঁচ করছে পদ্ম-নেতৃত্ব।
