মন্থর অর্থনীতিতে গতি আনতে মানুষের হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়াকেই মূল্য লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে রাজ্য সরকার। একের পর এক সামাজিক প্রকল্প কোষাগারের উপর চাপ বাড়িয়েছে অনেকটাই। মানুষকে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে সুযোগ দিচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’। সমান্তরালে এলাকাভিত্তিক পরিকাঠামোর চাহিদা মেটাতে চালানো হচ্ছে ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচী। কিন্তু নিত্য খরচ সামলে সেই পাড়ায় সমাধানে আসা চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ জোগাড়ে রীতিমতো মাথা ঘামাতে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের। সূত্রের খবর, সম্প্রতি পাড়ায় সমাধানের খরচ মেটাতে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দকে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে নবান্নের শীর্ষমহল। প্রসঙ্গত, গত ১৮ই নভেম্বর হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থ কমিশনের বরাদ্দ সদ্ব্যবহারে জোর দিয়ে বলেছিলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিতে টাকা যা আসবে তা যাতে ভাল ভাবে খরচ হয়। কেউ যাতে বদনাম করতে না পারে। আমি শুনতে চাই, পঞ্চায়েত সমিতি ভাল কাজ করছে। জেলা পরিষদেরও একই দায়িত্ব।”
পাশাপাশি মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়েছিলেন, “পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনেক টাকা আসবে চার বছরে। সেই টাকা ভাল ভাবে খরচ করতে হবে।” সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকা ব্যবহারে সমস্যা না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই জেলা প্রশাসনগুলিকে পরিকল্পনা করতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচীগুলির বাড়তি খরচ মেটাতে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ আর্থিক বছরে অর্থ কমিশনের পাঠানো অর্থ ব্যবহারের রূপরেখা যেমন তৈরি করতে হবে, তেমনই ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে যে বরাদ্দ অর্থ কমিশন দেবে, তা কাজে লাগানোর জন্য আগামী জানুয়ারি মাসে পাড়ায় সমাধান-এ প্রস্তাবিত কাজের পরিকল্পনাও করতে হবে। তবে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, পরিকল্পনায় কোনও কর্মসূচী নয়, বরং অগ্রাধিকার পাবে কাজের তালিকা।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন প্রতি আর্থিক বছরে গ্রামীণ পরিকাঠামো খাতে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। প্রতি বছর একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এই খাতে কমবেশি এক কোটি টাকা পায়। প্রশাসনিক ব্যাখ্যায়, প্রাপ্ত টাকার ৬০% খরচ হয় পানীয় জল, নিকাশি, সেচ, শৌচাগারের মতো পরিকাঠামো খাতে। বাকি ৪০% ব্যয় করার কথা রাস্তাঘাট তৈরি-মেরামত, কালভার্ট, ছোট সেতু ইত্যাদি তৈরিতে। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে অর্থ কমিশনের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য জানুয়ারিতেই কাজের পরিকল্পনা কেন্দ্রের নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করতে হবে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে। প্রস্তাবিত কাজের অতিরিক্ত পরিকল্পনার দায়িত্ব জেলাশাসকদের। জেলা সূত্রের খবর, সেই পরিকল্পনারই আওতায় আগামী পাড়ায় সমাধানের কাজগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষমহল। অর্থাৎ, আগামী জানুয়ারির পাড়ায় সমাধান-এ কী ধরনের কত কাজের দাবি মানুষ করছেন, তা বুঝে তৈরি তালিকা আপলোড করতে হবে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের টাকায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচী চালানো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে বিরোধীদের একাংশ প্রশ্ন তুললেও প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা রাজ্যের এই পরিকল্পনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। তাঁদের দাবি, গ্রাম পঞ্চায়েত যে পরিকল্পনা করে, তার সঙ্গে বাস্তবে মানুষের চাহিদার ততটা মিল থাকে না। আবার অর্থ কমিশনের বরাদ্দ ব্যবহার নিয়ে নানা সময় অনেক প্রশ্নও ওঠে। তাই পাড়ায় সমাধানের কাজগুলিতে অর্থ কমিশনের বরাদ্দ ব্যবহারের পরিকল্পনা যুক্তিসঙ্গত। তা ছাড়া, অর্থ কমিশন পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা দেয়। পাড়ায় সমাধান প্রকল্পেও একই ধরনের কাজ হয়। তাই বরাদ্দা টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্র একই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের চাহিদা পূরণ হওয়ায় অযৌক্তিক খরচের অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনাও কম। প্রবীণ আমলাদের একাংশ জানান, রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে টাকা জোগাড় এবং তার ব্যবহারের পরিকল্পনা করা বিশেষ জরুরি। অর্থ কমিশন যে অর্থ দিচ্ছে, তা নির্ধারিত খাতেই ব্যবহার হবে। ফলে কোনোভাবেই রীতি বা প্রথাবিরুদ্ধ নয় এই বন্দোবস্ত।