এখনও কাটছে না জট। স্রেফ মোদীর মুখের কথায় আন্দোলন থামাতে রাজি নন কৃষকরা। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে মুম্বইয়ে কিষাণ-মজদুর মেগা সমাবেশ করে এই দৃঢ় বার্তাই দিলেন আন্দোলনকারীরা। বরং আগামী এক সপ্তাহে যদি কৃষকদের বকেয়া দাবি মেটানো না হয়, তাহলে আন্দোলন আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনের এক বছরে মৃত কৃষকদের প্রত্যেকের পরিবারকে দিতে হবে ক্ষতিপূরণ। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা রবিবার স্পষ্ট জানিয়েছে, এমএসপি কমিটি তৈরির ঘোষণা করতে গিয়ে শনিবার কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার যা বলেছেন, তার সঙ্গে আন্দোলনকারীরা সহমত নন। বরং চাপে পড়ে অসত্য এবং অর্ধসত্য তথ্য দিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী। রবিবার কেন্দ্রের উদ্বেগ ফের বাড়িয়েছেন ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের (বিকেইউ) সর্বভারতীয় নেতা রাকেশ টিকায়েত।
এদিন মুম্বইয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়ে রাকেশ জানিয়েছেন, “অবিলম্বে এমএসপি আইন আনতে হবে সরকারকে। নাহলে ২৬শে জানুয়ারি খুব বেশি দূরে নয়। চার লক্ষ ট্রাক্টর ও আন্দোলনকারী কৃষকরাও সীমানাতে তৈরিই আছেন।” উল্লেখ্য, গত ২৬শে জানুয়ারি কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়েছিল রাজধানীতে। এদিন ফের রাকেশ টিকায়েতের মুখে ২৬শে জানুয়ারির ঘটনার উল্লেখকে রীতিমতো লক্ষ্যণীয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেন্দ্রীয় সরকারকে রীতিমতো তুলোধনা করে মুম্বইয়ের কিষাণ মজদুর মহাপঞ্চায়েতে টিকায়েত বলেছেন, “সরকার কৃষকদের ধোঁকা দিচ্ছে। আমাদের আরও সচেতন থাকতে হবে। এত কিছুর পরেও এখনও সরকার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেনি। এই সরকার ষড়যন্ত্রকারী, বেইমান এবং ধোঁকাবাজ। এরা কৃষক ও শ্রমিক-মজুরদের ছোট করার চেষ্টা করছে। এই উদ্দেশ্য সফল হতে দেওয়া যাবে না।”
প্রসঙ্গত, শনিবারই সিঙ্ঘু সীমানায় নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর সর্বভারতীয় কৃষক নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সোমবার সংসদ ভবন পর্যন্ত প্রস্তাবিত ট্রাক্টর মিছিল আপাতত স্থগিত থাকবে। আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর সিঙ্ঘু সীমানায় ফের নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবেন কৃষক নেতারা। সেখানেই কেন্দ্রের ভূমিকা খতিয়ে দেখে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করে দেওয়া হবে। এদিন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা জানিয়েছে, সোমবার লোকসভায় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পেশ করবেন মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। ফলে সোমবার কৃষক আন্দোলনের পক্ষে এক ঐতিহাসিক দিন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল, ২০২০ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না মোদী সরকার। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে আইনের ব্যাপারেও কথা বলছে না তারা। কিষাণ মোর্চার হুঁশিয়ারি, সরকার যদি মনে করে কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলেই অগণতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং কৃষকদের আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়া হবে, তাহলে তারা খুব ভুল ভাবছে। কিষাণ মোর্চার দাবি, বিগত এক বছরে যেমন প্রায় ৭০০ আন্দোলনকারী কৃষক শহীদ হয়েছেন, তেমনই প্রায় ৪৮ হাজার আন্দোলনকারীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মূলত উত্তরপ্রদেশ, চণ্ডীগড়, উত্তরাখণ্ড, দিল্লী এবং মধ্যপ্রদেশেই আইনি জালে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষকদের, এমনই অভিযোগ করেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।