দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব জাহিরের বহর ও আত্মপ্রচার ক্রমশ বাড়ছেই। বিমা, ব্যাঙ্ক, পেনশন পরিষেবার পর এবার আদিবাসী উন্নয়ন। ছ’-সাত বছর আগেও গরিব এবং সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাঙ্ক বা পেনশন পরিষেবা না পৌঁছোনোর দাবিতে গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় তাকে ‘বালখিল্যের অহঙ্কার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এবার নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, আদিবাসী ও উপজাতি উন্নয়নে সমস্ত কৃতিত্ব তাঁর। উপলক্ষ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর যোদ্ধা বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী। ১৫ই নভেম্বর দিনটিকে ইতিমধ্যেই ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সেই জন্মোৎসব পালনের সূত্রে সোমবার ভোপাল পৌঁছেছিলেন মোদী। সেখানেই তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর এই প্রথম উপজাতি সম্প্রদায়ের শিল্প, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এর আগে অনেক সরকার এসেছে। বহু দশক ধরে দেশ শাসন করেছে তারা। কিন্তু সকলেই নিজেদের স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্যকেই প্রাধান্য দিয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও অবদানকে অবহেলা করা হয়েছে দশকের পর দশক। তারা ভুলে যায় যে, আদিবাসীরা আমাদের দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ দখল করে আছেন। তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ চিন্তাভাবনা করেনি।” পাশাপাশি মোদীর দাবি, “আমরা যখন দেশগঠনে আদিবাসীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা বলি, অনেকেই বিস্মিত হয়। এমনকী অনেকে বিশ্বাসই করে না যে, ভারতীয় সংস্কৃতির অগ্রগতিতে আদিবাসীদের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে।” প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, আগে কখনও আদিবাসীদের অবদানকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি।
প্রসঙ্গত, জনজাতীয় গৌরব দিবস উপলক্ষে ভোপালের হবিবগঞ্জ স্টেশনের নাম বদল করেছে মোদী সরকার। নতুন নাম রানি কমলাপতি স্টেশন। মধ্যপ্রদেশের গোন্দ উপজাতির এই রানি ছিলেন অষ্টাদশ শতকের এক বীরাঙ্গনা। মোদীর এই চার ঘণ্টার সফরের জন্য মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার খরচ করেছে ২৩ কোটি টাকা। এই খবর প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক কম হয়নি। তীব্র আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। তাতে অবশ্য কর্মসূচী বা খরচের খুব একটা হেরফের হয়নি। আর এই বিতর্কের মধ্যেই নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপজাতি উন্নয়নের দাবি। স্বাধীনতার পর কোনও সরকারই উপজাতি উন্নয়নের কথা ভাবেনি, ইতিহাস মোদীর এই দাবি কোনাভাবেই সমর্থন করে না। কারণ, ১৯৭৮ সালে জনতা সরকারের আমলে হয়েছিল অনগ্রসরদের জন্য নতুন তফসিলি জাতি ও উপজাতি মন্ত্রক। আবার ১৯৯৯ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ির শাসনকালে তৈরি হয়েছিল পৃথক উপজাতি উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রক। এখানেই শেষ নয়, ২০০৪ সালে গঠিত হয়েছিল ন্যাশনাল কমিশন ফর ট্রাইবাল। সুতরাং বিমা, ব্যাঙ্ক ও পেনশনের মতো উপজাতি উন্নয়নের সব কৃতিত্ব মোদী নিতে চাইলেও ভারতের সরকারি রেকর্ড সেকথা বলছে না। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় প্রধানমন্ত্রী হয়তো আজ জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী অথবা মনমোহন সিংহদের উন্নয়নের কৃতিত্ব দিতে চাইছেন না। তার প্রমাণ আগেও মিলেছে। কিন্তু সরকারি স্তরে স্বয়ং অটলবিহারী বাজপেয়ী তৈরি করেছিলেন তফসিলি উপজাতিদের জন্য মন্ত্রক কিংবা কমিশন। এসব কি ভুলে গেলেন নরেন্দ্র মোদী? উঠছে প্রশ্ন।