৫ই সেপ্টেম্বর নয়, এবার থেকে বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের দিনই শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হোক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এমনটাই আবেদন জানিয়েছে বাংলার বুদ্ধিজীবী মহল। বাংলা পক্ষ সংগঠনের উদ্যোগে বুদ্ধিজীবীদের সাক্ষর সহ সেই স্মারকলিপি ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী দফতরে। প্রতি বছরই ২৬ সেপ্টেম্বর গোটা বাংলা জুড়েই সাড়ম্বরে পালিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। সেটিকে এবার স্বীকৃতি দিয়ে ‘বাংলার জাতীয় শিক্ষক’ দিবস হিসেবে পালনে উদ্যোগী হলেন এ রাজ্যের বিশিষ্টরা।
এই তালিকায় রয়েছেন কবি জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, ইতিহাসবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলাম, রূপঙ্কর বাগচী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়,বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন, অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য সহ অন্যরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বাংলার চিন্তাশীলতার পরিসরে বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি কেবল নবজাগরণের একজন কাণ্ডারীই নন, বরং গোটা ভারতবর্ষের চিন্তন এবং মননের পরিসরে আধুনিকতার পথপ্রদর্শক। তিনি আক্ষরিক অর্থেই জাতির শিক্ষক। বাঙালির ঘরে ঘরে শিশুরা অক্ষরজ্ঞান লাভ করে বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ পড়েই। কিন্তু, বিশিষ্টদের অভিযোগ, বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষে বিদ্যাসাগরের মূল্যায়ন এবং সম্মান এখনও করতে পারেনি। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ভারত তথা বাংলাকে অন্ধকারে ঢেকে ফেলতে চাইছে। এই সময়ই বিদ্যাসাগরকে আরও দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, তাঁর চেতনা, দর্শনের সঙ্গে জাতির সম্পৃক্ততাআরও বিস্তার হওয়া প্রয়োজন। এই অন্ধকার সময়ই বিদ্যাসাগরের জ্ঞানের আলো সকলকে দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টরা। ফলে তাঁরে জন্মদিনটিকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়ার এটাই আসল সময় বলে মনে করছেন তাঁরা।
পাশাপাশি, ২৬ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ‘রাষ্ট্রীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যও সংসদে এই দাবি উত্থাপন করার জন্য আবেদন করেছেন বিশিষ্টরা। এতে ভারতে বিদ্যাসাগরের পরিচিতি কেবল বাড়বেই তা নয়, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বাংলার এই মহাপুরুষের মূল্যায়ন আরও বাড়াবে। পাশাপাশি, তিনি প্রাপ্ত মর্যাদাও পাবেন বলে মনে করছেন বাংলার শিক্ষা, শিল্প ও চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্টরা। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছা মেনে পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত ভগবতী বিদ্যালয় এবং স্মৃতি মন্দির সংরক্ষণ করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। তার জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই কাজ কী ভাবে হবে, তার ‘ব্লু-প্রিন্ট’ বা নকশা তৈরি করে দিয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের স্মতিচিহ্ন হিসেবে ভগবতী বিদ্যালয়ের লাগোয়া যে দু’টি পুরোনো মাটির বাড়ি রয়েছে, সেগুলিকে অবিকৃত রাখতে হবে। ফাঁকা জমিতে তৈরি হবে আম্রকুঞ্জ। বাইরের পর্যটকদের থাকার জন্য পান্থনিবাস তৈরি হবে। আমূল সংস্কার করা হবে ভগবতী স্কুলের যে পুরোনা ভবনটিকেও।