দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে টালবাহানার পরে, অবশেষে শুরু হতে চলেছে জোকা-মাঝেরহাট মেট্রো। রেল বোর্ড ইতিমধ্যেই এই প্রকল্প চালু করতে সবুজ সংকেত দিয়েছে। মেট্রো রেলের তরফ থেকেও লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে আগামী ১ বছর। তার মধ্যেই জোকা থেকে মাঝেরহাট অবধি রেল চালু করে দিতে চায় তারা। কোভিড পরিস্থিতিতেও তাই অত্যন্ত দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থা রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড।
২০০৯ সালে রেল মন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। কখনও জমি জটিলতা, কখনও কাজ শুরুর ক্ষেত্রে আইনি বাধা। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই প্রকল্প। প্রতি বাজেটে এই প্রকল্পের জন্যে অর্থের অনুমোদন আসলেও কাজ শুরু নিয়ে অব্যাহত ছিল জটিলতা।
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, চালু হচ্ছে জোকা, ঠাকুরপুকুর, সখের বাজার, বেহালা চৌরাস্তা, বেহালা বাজার, তারাতলা ও মাঝেরহাট স্টেশন। মাঝেরহাটের পরে মোমিনপুর, ভিক্টোরিয়া হয়ে পার্ক স্ট্রিট বা এসপ্ল্যানেড অবধি কাজ কিভাবে এগোবে তা নিয়ে জারি আইনি লড়াই। জোকা থেকে তারাতলা অবধি বিভিন্ন স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। ফ্লোর তৈরির কাজ শেষ। লিফট বসানো হয়েছে। টিকিট কাউন্টার তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনে বসেছে ম্যুরাল। সিগন্যালিং সিস্টেমের জন্যে টেন্ডার ডাকা হয়ে গেছে। সেই কাজও শুরু হয়ে যাবে।
অন্যদিকে মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। ইন্দ্রজিৎ সরকার, চাকুরীরত জোকায়। তিনি জানাচ্ছেন, বেহালার একটা বড় অংশের মানুষকে অটো ধরেই আসতে হবে মেট্রো স্টেশনে। তার পরে মেট্রো ধরে সেই বেহালার মধ্যেই যাতায়াত করতে হবে৷ এসপ্ল্যানেড বা পার্ক স্ট্রিট অবধি মেট্রো না গেলে সুবিধা কোথায়। বিপরীত মত পাওয়া যাচ্ছে অবশ্য। শিয়ালদহ থেকে কাজে ঠাকুরপুকুর আসেন সুরেন্দ্র কুমার।
তার বক্তব্য, বাসে আসতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। মেট্রো চালু হলে মাঝেরহাট অবধি ট্রেনে এসে তারপর মেট্রো ধরে নিতে পারব। সহমত পোষণ করেছেন, অপর বাসিন্দা তপন চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, বেহালা থেকে বেহালা বাসে নুন্যতম ১০টাকা। সময় ৩০ মিনিট। মেট্রোয় সেই ১০টাকা, সময় ১২ মিনিট। কলকাতার খুঁড়িয়ে চলা এই মেট্রোর চাকা গড়াক সেই কামনাই করছেন অধিকাংশ মানুষ।
এই মেট্রো পথের জন্যে আত্মনির্ভর প্রকল্পের ইস্পাত ব্যবহার হয়েছিল। আপাতত ট্র্যাক বসে গিয়েছে। প্রতিদিন ট্রলিতে করে চলছে তার ইন্সপেকশন। তবে এই কাজ আরও সঠিক ভাবে করতে ডিসেম্বর মাসে পরিকল্পনা চলছে একটা রেক পাঠানোর৷ যা দিয়ে লাইন পরীক্ষা, সিগন্যাল পরীক্ষা করানো যাবে। তবে এই প্রকল্প চালু হলে তা আদৌ লাভজনক হবে কি? মেট্রো ও জনগণ দু’পক্ষের জন্যেই উঠছে প্রশ্ন। মেট্রো অবশ্য জানাচ্ছে যাত্রী পরিবহণ করে তাদের লাভ হয় না। তাই এই সব মেট্রো স্টেশনের অব্যবহৃত জমি সহ একাধিক জায়গায় ব্র্যান্ডিং করতে চায় তারা। তা দিয়েই অর্থনৈতিক ভাবে লাভ হবে তাদের।