বাংলা অথবা হিন্দি সিনেমায় এমন ঘটনা আকছাড় দেখা যায়। থানার কোনও আধিকারিককে বদলি করে দিচ্ছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আর তা রুখতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ নেমে পড়ছেন রাস্তায়। এবার সে ছবি বাস্তবেও দেখা গেল বাংলার মাটিতে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণবঙ্গের ক্যানিংয়ে। সদ্য বদলির নির্দেশ এসেছে ক্যানিং থানার আইসির। কিন্তু তাঁকে কিছুতেই ছাড়তে চান না এলাকার লোকজন। বিশেষত মহিলারা। আইসির বদলির নির্দেশ রদ করতে শেষ অবধি পথেই নেমে পড়লেন তাঁরা। ক্যানিং-বারুইপুর রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন মঙ্গলবার সকালে।
মাতলা নদী সংলগ্ন ক্যানিং থানা। সেখানেই এতদিন আইসির দায়িত্ব সামলেছেন আতিবুর রহমান। সদ্য তাঁর বদলির নির্দেশ এসেছে। এবার তিনি চলে যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের কার্শিয়াঙে। এ খবর ছড়াতেই প্রতিবাদে সরব হন এলাকার মহিলারা। কিন্তু হঠাৎ কেন এরকম বিক্ষোভ? বিক্ষোভকারীরা জানালেন, এই আইসির ‘কর্তব্যপরায়ণতা’-এর কথা। আতিবুর রহমানের ‘দাপটে’ এলাকার মহিলাদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহস পান না কোনো বদমায়েশ। মেয়েদের সঙ্গে কেউ কোনও রকম দুর্ব্যবহার করলে অবধারিত থাকে পুলিশের কড়া ডোজ। কোথাও মদের ঠেকের খবর এলে, এই ‘দাবাং’ অফিসার দলবল নিয়ে গিয়ে তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন।
বিক্ষোভকারীরা জানালেন, এক কথায় এই পুলিশ অফিসার এলাকার মেয়েদের কাছে ভগবান। শুধু মেয়েরাই নন, একই কথা ছেলেদেরও। যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকেন এই আইসি। লাঠি হাতে নড়বড়ে এক মহিলাও শামিল হয়েছেন এই বিক্ষোভে। তাঁর কথায়, “আমি পা ভেঙে পড়েছিলাম। আমার ছেলে মেয়ে কেউ নেই সঙ্গে। ওই আইসি নিয়ে গিয়েছিল। সব করেছে।” সেই আইসিকে বদলি করা হচ্ছে শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে।
প্রথমে ক্যানিং থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তারপর বিক্ষোভকারীরা ক্যানিং-বারুইপুর সড়কও অবরোধ করেন। এদিকে এর জেরে রাস্তাঘাট একেবারে স্তব্ধ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই আইসিকেই নামতে হয় ময়দানে। সেই মহিলা বিক্ষোভকারীদের ফেরাতে রীতিমত হাত জোড় করে অনুরোধও করেন আইসি আতিবুর রহমান। কিন্তু বিক্ষোভকারীরাও নাছোড়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ক্যানিংয়ের এসডিপিও গোবিন্দ সিকদার। তিনিও একই অনুরোধ করেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় আনা হয় ক্যানিং মহিলা থানার পুলিশ। তবে কোনও ভাবেই দমানো যাচ্ছে না ওই মহিলাদের।