এক বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণা আজও বুকে করে বয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিটি বাঙালি। এরই মধ্যে আরও একবার বাংলাকে ভাঙার চক্রান্ত শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির! হ্যাঁ, এবার বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার দাবি তুলছে বিজেপি। আর তা উঠছে উত্তরবঙ্গ থেকেই। তাদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। রবিবার জলপাইগুড়িতে বিজেপির এক বৈঠকে সেই প্রস্তাবও ওঠে।
পদ্মশিবিরের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ঘেঁষা পাঁচটি জেলায় বিজেপির আধিপত্য বেশি। সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ, বিধায়ক তাদের দলেরই। সেটা মাথায় রেখেই এই প্রস্তাব তুলছে বিজেপি। দলীয় সাংসদ মারফত ওই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে তৎপরতা শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। বৈঠকে তোলা প্রস্তাবে মূলত অনুন্নয়ন, অনুপ্রবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়কে জোর দেওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা।
বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গ এ রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় থাকায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল থেকে দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াতের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও ঢুকে যাচ্ছে। এমনকী চীনারাও একে করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই উত্তরবঙ্গ অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ওই প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়েছে, বিজেপির নির্বাচিত সাংসদ, বিধায়করাও নিরাপদ নন। বিভিন্ন সময় তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একাধিক কার্যকর্তা প্রচার চালাচ্ছিলেন। দাবি ছিল, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার পরিকল্পনা নেবে। আসলে সেই সময় বিজেপির সব স্তরের নেতা ধরেই নিয়েছিলেন, বিজেপিই এবার বাংলার ক্ষমতা দখল করবে। কিন্তু তাঁদের সেই ‘বাড়া ভাতে ছাই’ পড়ার পরে এবার ঘুরপথে রাজ্য ভাঙার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন শাসক তৃণমূলের নেতারা।
গেরুয়া শিবিরের উত্তরবঙ্গের এক প্রবীণ নেতার কথায়, আমাদের পরিকল্পনা হল যতজন সাংসদ আছেন, তাঁদের নিয়ে এই ইস্যুতে আন্দোলন। রাজ্যের ২ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। চীন থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশ, যারা ভারতের সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তাদের রুখতে হবে। ওই দাবি সাংসদের মারফত প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
পাহাড়ের মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে আগেও বাংলা ভাগের কৌশল নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার চলেছে ভোট হাসিলের খেলা। সেই প্রতিশ্রুতির অবশ্য ভরাডুবি হয়েছে। বাংলার মানুষও রাজ্য ভাগ চাননি। এই বৈঠক প্রসঙ্গে তৃণমূলের সাফ কথা, উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে দেওয়ার প্রচেষ্টা সংবিধান বিরোধী, গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ঙ্কর থ্রেট।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, ‘বাংলা একবার বিভাজিত হয়েছে। আর বাংলায় বিভাজন আমরা চাই না। এই বিচ্ছিন্ন হওয়ার রাজনীতি তৃণমূল সরকার কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুংকে পাশে বসিয়ে বহুদিন আগেই তা ঘোষণা করে দিয়েছেন।’