এবার বাংলার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ ঘিরে সরব হল প্রাক্তন আমলা মহলও। রাজ্যের অন্তত দু’জন প্রাক্তন মুখ্যসচিবের মতে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। যদিও আইনগত ভাবে এতে কোনও বাধা নেই বলেই মনে করছেন প্রাক্তন আমলাদের একাংশ।
শুক্রবার আলাপনকে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লীতে বদলির নির্দেশ জারি করার পর থেকেই জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাতে ওই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরেই দ্বৈরথ চলছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে। শাসকদল তৃণমূল বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ওই বদলির নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু কেন্দ্র ওই নির্দেশ ফিরিয়ে না নিলে কী করা হবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে জল্পনা।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আইএএস ক্যাডার বিধি, ১৯৫৪-র বিধি (১)-এর অধীনে কোনও সচিব পর্যায়ের আধিকারিক কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বে যাওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে একমত হওয়া জরুরি। বিধি অনুসারে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ হতেই পারে। তবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্ত অনুমোদন হলেই কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, “অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (মৃত্যু তথা অবসরকালীন সুবিধা) বিধি, ১৯৫৮ সালের ধারা ১৬ (১) এর বিধান অনুসারে কেবল তিন মাসের জন্য এই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। ভারতীয় সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা সাধারণত ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন। রাজ্য সরকারের সুপারিশে ছ’মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। তিনি যদি সাধারণ ভাবে অবসর নেওয়ার তারিখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে যোগ দেন, তবে তিনি অবসরগ্রহণের তারিখের বাইরে যেতে পারবেন না। কারণ তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছে কেবল মুখ্যসচিবের পদের জন্যই।”
প্রাক্তন মুখ্যসচিব বাসুদেবের মতে, এই বদলির ঘটনা দুঃখজনক। তাঁর বক্তব্য, “সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং অথবা হাইকোর্টে যেতে পারেন। প্রশাসনিক ভাবে এই বদলির ঘটনা দুঃখজনক।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের আরও এক মুখ্যসচিবও কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পদক্ষেপকে সঠিক বলেননি। তাঁর কথায়, “যদি কোনও সচিব পর্যায়ের আধিকারিক দিল্লিতে ডেপুটেশনে যেতে চান, তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে। রাজ্য সরকার তা বিবেচনা করে পাঠিয়ে দেবেন কেন্দ্রে। তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেখে যে কোন মন্ত্রকে আধিকারিকের প্রয়োজন আছে কিনা। এভাবে অনেক সময়ই অনেক আধিকারিক আবেদন করে থাকেন। কিন্তু আলাপনবাবু এমন কোনও আবেদন করেছেন বলে জানা যাচ্ছে না।”
পাশাপাশি ওই প্রাক্তন মুখ্যসচিব আরও বলেছেন, “যাঁর অবসরের দিন ৩১ মে, যাঁর চাকরির মেয়াদ রাজ্য সরকারের অনুরোধেই তিনমাস বাড়ানো হয়েছে, তাঁকে হঠাৎ কেন ডেকে পাঠানো হল, তার সঠিক কোনও ব্যাখ্যা নেই। এমনও যদি বলা হত যে, আগামী দু’বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে কেন্দ্র কোনও সচিব পর্যায়ের পদে বসাতে চায়, তা হলেও এই বদলি বিশ্বাসযোগ্য হত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কথাও বলা হয়নি। সেই কারণেই পুরো বিষয়টি গোলমেলে মনে হচ্ছে।”