কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপকভাবে বিপর্সস্ত পুরো দেশ। তার মধ্যে দেশবাসীকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ওষুধের যোগানও দিতে অক্ষম কেন্দ্রীয় সরকার। ১লা মে থেকে ১৮- ৪৫ বছর বয়সীদের টিকা নেওয়ার ছাড়পত্র দিলেও তার জন্যে মোটেই প্রস্তুত নয় দেশের সরকার। টিকা নিতে গেলে সরকারি অ্যাপ কোউইনে রেজিস্টার করে স্লট বুক করতে হচ্ছে। স্লট বুক করা যেন এক অনিশ্চিত খেলা। বেশির ভাগই তাতে অসফল হচ্ছেন। যারা স্লটে নিজের নাম জুড়তেও পারছেন, তাদেরকেও শেষ মুহূর্তে ভ্যাক্সিন না থাকায় হাসপাতালগুলি না বলে দিচ্ছে। গোটা দেশের ২০ শতাংশ মানুষকে দেওয়ার মতো ভ্যাক্সিনের যোগানও নেই ভারত সরকারের কাছে।
ভ্যাক্সিনের এই আকালের মূল কারণটি হল ভারত সরকারের ঢিলেমি। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। উন্নত দেশগুলি যখন আগে থেকেই ভ্যাক্সিনের বুকিং করে রেখেছিল, ভারত বুক করে ভ্যাক্সিন ছাড়পত্র পাওয়ার পর। এই একই কারণে এতো বেশি টাকা দিয়েও এই দেশে ভ্যাক্সিন কিনতে হচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে যেখানে ভ্যাক্সিনের অর্ডার বেশি দেওয়ায় দাম কম হওয়ার কথা, সেখানে দাম উল্টে বেশি। কারণ, একে সরকার একসাথে সব ভ্যাক্সিনের অর্ডার দেয়নি, আর যা দিয়েছে তার আগে থেকে দামদর করেনি। এমনকি রাজ্য এবং কেন্দ্রের ভ্যাক্সিনের দামের তারতম্যের জন্যেও কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী। কারণ আগে থেকে ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সাথে এ বিষয়ে কথা বলে নেওয়া হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলি আগে থেকেই সব ভ্যাক্সিন বুক করে রেখেছে, ফলে আগামী আরও দু তিন মাসের মধ্যে ফাইজার, স্পুটনিক, জনসন এন্ড জনসন ভ্যাক্সিন ভারতের মতো পরে বুক করা দেশগুলিকে যোগান দিতে পারবে না প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। একইভাবে, কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে কোভিশিল্ড ১৫০ টাকা প্রতি ডোজ কিনছে, সেখানে রাজ্যগুলিকে একটি ডোজ পেতে খরচা করতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা দ্বিগুন। কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে তা ৬০০ টাকা, অর্থাৎ চারগুণ। কেন্দ্র সরকার আগে থেকেই প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সাথে দামদর করে থাকলে কেন্দ্রের দামেই রাজ্যগুলি ভ্যাক্সিন পেতে পারত। যদিও বিরোধীরা এই ঘটনাকে ইচ্ছাকৃত আর্থিক কেলেঙ্কারি বলে আখ্যা দিচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারতের দুই ভ্যাক্সিন প্রস্তুত কারক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক ভ্যাক্সিনের প্রস্তুত মূল্য এবং বিক্রয় চুক্তি কোনটাই সামনে আনছে না। এই নিয়ে বার বার সরব হয়েছে বিরোধীরা। এখন যদিও অন্যান্য ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সরকার ভ্যাক্সিন তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে।