করোনা আবহের জেরে ফের ক্যাটারিং ব্যবসায় লকডাউন! সমস্ত প্রস্তুতিই সারা ছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশে সবই এখন বাতিল করতে হয়েছে। যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতেই ৫০ জন নিমন্ত্রিতের সংখ্যা বাঁধলেও ঝুঁকি নিতে নারাজ বরকর্তা থেকে কনের বাবা, প্রত্যেকেই। “দেখলেন না ত্রিপুরায় কী হল! দরকার কী লোক খাইয়ে বিপদ ডেকে।” সকলেরই এক বক্তব্য। আর বিয়েবাড়িতে এই করোনা আতঙ্কই আজ মন্দা ডেকে এনেছে ক্যাটারিং ব্যবসায় যুক্ত মানুষগুলোর মধ্যে।
মে, জুন এবং জুলাই মাসে একগুচ্ছ বিয়ের তারিখ। কিন্তু কোথায় কী! করোনা আবহে চতুর্দিকে চলছে বিয়ে বাতিলের হিড়িক। যেগুলো হচ্ছে সেগুলোও ওই রেজিস্ট্রিতে নমো নমো করে। গত বছরের শেষ দিক থেকে করোনা কিছুটা কমায় বিয়ের তারিখ দেখে অনেকেই বিয়ে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়েই সব ওলটপালট। বাড়ি ভাড়া থেকে ক্যাটারিং, অনেকেরই অ্যাডভান্সের টাকা গচ্চা গিয়েছে। কিন্তু বাতিল হয়েছে বেশিরভাগ বিয়েই। ফলে হাল খারাপ ক্যাটারিংয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের।
পয়লা বৈশাখের দিন হালখাতা করে ওঁদেরও ব্যবসায় নতুন বছর শুরু হয়। এপ্রিল থেকে আগস্ট আবার নভেম্বর থেকে মার্চে গোটা বছরের বুকিং আসতে থাকে নতুন খাতার পাতায় পাতায়। কিন্তু এ বছরটা একটা পাতাতেও পেনের আঁচড় পড়েনি। উল্টে গতবছরের বেশ কয়েকটি বুকিংও বাতিল হয়েছে। মালিকের যেমন-তেমন অবস্থা হলেও বাড়িতে হাড়ি চড়ছে না সেই ছেলেগুলোর, যাঁরা আমার-আপনার পাতে উৎসব অনুষ্ঠানে মাটন বিরিয়ানি বা চিকেন চাঁপ সাজিয়ে দিয়ে যান। ওঁরা মানে, ছোট বা মাঝারি, ক্যাটারিং সংস্থায় যাঁরা খাবার পরিবেশনের কাজ করেন, তাঁরা।
এবছর মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত যে বুকিংগুলো গতবছর করা ছিল সেগুলোও অধিকাংশই বাতিল হয়েছে। গতবছরও একই পরিস্থিতি গিয়েছে। ফলে অনেকেই এখন এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। তারিখ মেনে কিছু বিয়ে হচ্ছে গোটা রাজ্যেই। কিন্তু তা কোনরকমে রেজিস্ট্রি করে। বড়জোর পুরোহিত এসে মালাবদল আর মন্ত্রোচ্চারণ করাচ্ছেন। কোনওমতে নমো নমো করে চার হাত এক করে দেওয়া। আত্মীয়-পরিজন, পাড়াপড়শি, বরযাত্রী-কনেযাত্রী- এসবই এখন অতীত। নিমন্ত্রিতরাও কে কোথা থেকে কীভাবে অনুষ্ঠানে আসবেন সেই আশঙ্কায় আর নিমন্ত্রণ করছেন না কেউ। যদি কেউ সংক্রমণ নিয়েই ঘুরে বেড়ান! তবে সব মাটি।
যাঁরা গতবছর বুক করেছিলেন এবছর বিয়ের জন্য, তাঁরা প্রত্যেকেই বুকিং বাতিল করছেন। আর নতুন করে আগামী বছরের জন্য কেউ বুকও করছেন না। ফলত এক অদ্ভুত সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে এই ক্যাটারিং ব্যবসা। গোটা রাজ্যে কয়েক হাজার মানুষ এই ক্যাটারিং ব্যবসা চালান। কারও ছোট আবার কারও বা বড়। আবার তাঁদের এই ব্যবসার সঙ্গে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন করে যুক্ত থাকেন। এঁরা অধিকাংশই অনুষ্ঠানপিছু টাকা পান। কাজ নেই, তাই আয়ও নেই। এঁরাই পড়েছেন সবথেকে বেশি সঙ্কটে। কেউ একটা অনুষ্ঠানে পান ২০০ টাকা আবার কেউ ৫০০-১০০০ টাকাও। তাঁরা প্রত্যেকেই এখন কর্মহীন। আশঙ্কা, করোনায় না মরলেও, এবার ভাতে মারা পড়বেন তারা।